অশ্বত্থ গাছের ১০টি উপকারিতা- বৈজ্ঞানিক নাম Ficus Religiosa। অশ্বত্থ এক প্রকার ডুমুর জাতীয় বৃক্ষ যার উৎপত্তি হয়েছে মূলত বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত, মায়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, দক্ষিণ পশ্চিম চীন এবং ইন্দোচীনে। অশ্বত্থকে বোধি বৃক্ষও বলা হয়ে থাকে।
অশ্বত্থ বিরল একটি গাছ যা ২৪ ঘণ্টাই অক্সিজেন ত্যাগ করে। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী বেশ কিছু ওষুধ তৈরিতে অশ্বত্থের পাতা ব্যবহার করা হয়। নানা ধরনের হৃদরোগে অশ্বত্থের পাতা, ফল, ফুল, ছাল ও শেকড় বেশ কাজে দেয়।
সচরাচর দেখা দেয় এমন কিছু রোগ ও স্বাস্থ্য সমস্যায় অশ্বথ গাছের কিছু ব্যবহার এখানে দেওয়া হল-
১) স্মরণশক্তি:
অশ্বত্থের পাকা ফল স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কবিরাজি (আয়ুর্বেদ) চিকিৎসা মতে প্রতি দিন পাঁচটি করে অশ্বথের পাকা ফল গ্রহণ স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে। এটা শরীর কেও সুপুষ্ট, মজবুত করে।
২) হৃৎপিণ্ডের জন্য:
১৫টি অশ্বত্থের পাতা একটি পাতিলে নিয়ে সেদ্ধ করুন। পানি শুকিয়ে তিন ভাগের একভাগ হলে চুলা থেকে নামিয়ে এর ক্কাথগুলো তিন ভাগ করুন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে তিন ঘণ্টা এবং দৈনিক তিন বার পান করুন এই তরল। কয়েক দিন চালিয়ে যান। এটা আপনার হৃদপিণ্ডকে মজবুত করবে এবং বিভিন্ন ধরনের হৃদ রোগ প্রতিরোধ করবে।
৩) অস্বাভাবিক মাত্রায় অশ্রু:
যদি চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ে তাহলে অশ্বথের কয়েকটি কচি পাতা বা ৫টি মুকুল নিয়ে এক বাটি পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করলে অশ্রু ঝরা বন্ধ এছাড়া কচি পাতার রসে বা মুকুলের রসে বিশুদ্ধ মধু মিশিয়ে কাঠি দিয়ে চোখে প্রতি দিন কাজল পাড়ার মতো লাগালে চোখের লাল ভাব বা জ্বালা দূর হয়।
৪) দাঁত ব্যাথা:
দাঁত পরিষ্কার ও মজবুত করার জন্য এর শাখা মেসওয়াক করতে ব্যবহার করুন। এই দাঁতন দন্ত ব্যথাও দূর করে থাকে। অশ্বথের কচি পাতা গোল মরিচের সঙ্গে বেটে মটরের দানার মতো ছোট ছোট গুটি তৈরি করে নিন। দাঁত ব্যথা দেখা দিলে এমনি একটা গুটি বা বড়ি ব্যথা যুক্ত দাঁতের নিচে কিছুক্ষণ চেপে রাখলে দাঁত ব্যাথা সেরে যায়।
৫) কৃমি:
অশ্বথের পঞ্চাঙ্গ চূর্ণ এবং গুড় সমান মাত্রায় মিশিয়ে মৌরির আরকের সঙ্গে দিনে ২ বার সেবন করলে পেটের কৃমি ম’রে যায়। ছোট শিশুদের পক্ষে এটি দ্রুত ফলপ্রদ ঔষধি।
৬) কোষ্ঠকাঠিন্য:
কখনো কখনো অন্ত্রের মধ্যে থাকা জল শুকাতে শুরু করে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এমন অবস্থায় সমাধান দেবে এই গাছ। অশ্বথের পাতা ছায়ায় শুকিয়ে চূর্ণ করে তাতে গুড় মিশিয়ে ছোট ছোট গুলি/বড়ি তৈরি করে নিন। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে রাতে শোওয়ার আগে ২টি করে বড়ি হালকা গরম দুধের সঙ্গে সেবন করুন। দ্রুত আরাম হবে এবং পেট খোলাসা হয়ে দাস্ত হবে।
৭) গর্ভধারণ:
যারা স্বাভাবিক গর্ভ ধারণে জটিলতার মুখে পড়ছেন তারা পিপল বা অশ্বথের শুকনো ফল থেকে উপকার পেতে পারেন। এই ফল শুকনো অবস্থায় সংগ্রহ করে থেঁতো বা গুঁড়ো করে চূর্ণ করে নিন এবং কাপড়ে ছেঁকে নিন। যে সমস্ত নারী নিঃসন্তান তাদের এই চূর্ণ ৫ গ্রাম মাত্রায় এক গ্লাস হালকা গরম দুধ (খাঁটি) সহযোগে কয়েক মাস নিয়মিত সেবন করালে একপর্যায়ে অবশ্যই গর্ভ ধারণ হবে। শুধু মাত্র ঋ’তু’স্রাবের দিন গুলিতে এই ওষুধ সেবন বন্ধ রাখতে হবে।
৮) শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি:
উপুর্যপরি শ্বাস পড়তে শুরু করলে বা হাঁপানির টান শুরু হলে অশ্বথের শুকনো ছালের চূর্ণ ৫ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে হালকা গরম পানির সঙ্গে দিনে ৩ বার করে সেবন করলে রোগী প্রভূত আরাম বোধ করবে। নিয়মিত ব্যবহারে ধীরে ধীরে রোগও প্রশমিত হবে।
৯) নাক দিয়ে রক্ত পড়া:
৫০ গ্রাম পিপলের দুধ বা আঠাতে সমমাত্রায় মিছরি মিশিয়ে চূর্ণ করে নিন। প্রত্যেক দিন সকালে ৩ গ্রাম করে এই চূর্ণ সেবন করলে শরীরের গরম শান্ত হয় এবং নাক দিয়ে র’ ক্ত পড়া প্রশমিত হয়।
১০) পুরুষদের দুর্বলতা:
পুরুষ দের বিশেষ করে মধ্য বয়সী পুরুষ দের অনেক সময় এই যৌ’ ন সমস্যাটি অর্থাৎ শীঘ্র পতন সমস্যা দেখা যায়। এমন হলে প্রথম অবস্থায় পিপল গাছের সাদা রস ১১ ফোঁটা করে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছুর সঙ্গে নিয়মিত কিছু দিন সেবন করলে সমস্যা দূর হয়। নিয়মিত কয়েক মাস এই রস সেবন করলে ভাল ফল মেলে।