আপনার চুল পড়া কমান এই ৭ উপায়ে

1288

চুল পড়বেই এটা স্বাভাবিক। যার জন্ম আছে তার মৃত্যু আছে। আমাদের চুল সাধারণত ১ হাজার ১শত ১০ দিন বাঁচে। তারপর মারা যায়। আমরা যদি মাথার চুল দিয়ে শুরু করি।

আমাদের মাথায় গড়ে ১ লক্ষ চুল আছে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ চুল গজায় এবং ১০০ থেকে ১৫০ চুল পড়ে যায়। এটা নরমাল। 

নানা কারণে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। যেমন ধরুন- পরিবেশ দূষণ, বয়স, স্ট্রেস, স্মোকিং, পুষ্টির অভাব, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, জেনেটিক কারণ, স্কাল্প ইনফেকশন, হেয়ার প্রোডাক্টের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, বেশ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, থাইরয়েড, অটোইমিউন ডিজিজ, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, অ্যানিমিয়া প্রভৃতি।

চুল পড়া কমানো ও বন্ধের উপায় সম্পর্কে স্বাস্থ্যবিষয়ক বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট নিয়মিত প্রতিবেদন করে থাকে। সেই আলোকে চুল পড়া কমানোর কয়েকটি উপায় সম্পর্কে দেওয়া হলো-

 মাথার ত্বক বুঝে শ্যাম্পু করতে হবে।  ত্বক শুষ্ক হলে শ্যাম্পু কম করাই ভালো। মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলে সপ্তাহে দু-তিনবার পরিষ্কার করা প্রয়োজন। শ্যাম্পু বেশিক্ষণ মাথায় দিয়ে রাখা ঠিক না।  এতে চুল নরম হয়ে পড়তে পারে।

 যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাদের মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে, চুলও কম পড়ে।  তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

 মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন কম থাকায় অনেক সময় চুল ঝড়ে পড়ে।  রক্তসঞ্চালন বাড়াতে তেল ব্যবহারের বিকল্প নেই। আপনার মাথার ত্বকের সঙ্গে মানানসই এরকম তেল সপ্তাহে অন্তত একবার মাথায় দিন।  তেল ব্যবহারের দুই ঘন্টা ‘শাওয়ার ক্যাপ’ পরে থাকুন।  তার পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।  

সব কন্ডিশনার চুলে ব্যবহার করা যাবে না। উন্নত কন্ডিশনার চুলের জন্য উপকারী। এতে থাকে অ্যামিনো অ্যাসিড ক্ষয় পূরণ করে চুলকে মসৃণ করে তোলে।

 যতই যত্ন নিন যদি খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার না রাখেন, তবে চুল ধরে রাখা কঠিন হবে।  তাই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও লৌহ ধরনের খাবার রোজ খাদ্যতালিকায় রাখুন। এতে চুলের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।

 চুল বড় হলে আগা ফেটে যায়। নিয়মিত চুলের আগা ছেঁটে ফেলতে হবে।  

 চুল রঙ করা, স্ট্রেট করা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি বয়ে আনে। এ ছাড়া ভেজা চুলে ‘ব্লো ড্রায়ার’, ‘কার্লিং রড’ ব্যবহার ঠিক নয়। এগুলো চুলের ভেজাভাব শুষে নেয় ও ভঙ্গুরতা সৃষ্টি করে।

আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন ৭টি ভেষজের কথা যেগুলো চুলপড়া কমাতে বেশ কার্যকর।

১. অশ্বগন্ধা
চুল পড়া আটকাতে যে যে প্রকৃতিক উপাদানগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল অশ্বগন্ধা। এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে এমন কিছু পরিবর্তন করতে শুরু করে যে তার প্রভাবে চুল পড়া ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, পিত্ত দোষের কারণে হওয়া হেয়ার ফল কমাতেও এই অশ্বগন্ধা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. অ্যালোভেরা
এতে রয়েছে এমন কিছু এনজাইম, যা চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে চুল পড়লেও মাথা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। অ্যালোভেরার উপকারিতা কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যায় না। এতে উপস্থিত অ্যালকালাইন প্রপার্টিজ স্কাল্পের পি এইচ লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে চুল পড়ার হার কমে। 

কীভাবে ব্যবহার করতে হবে এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে?
পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল নিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ফেলুন। কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করে হালকা গরম পানিতে ভাল করে মাথাটা ধুয়ে নিন। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে ৩-৪ বার এই ভাবে অ্যালো বেরা জেল মাথায় লাগলে দারুন উপকার পাওয়া যায়।

৩. মেথি
চুল পড়া আটকাতে মেথি দারুন কাজে আসে। আসলে এতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যখনই দেখবেন চুল পড়ার হার খুব বেড়ে গেছে, তখনই অল্প করে মেথি বীজ নিয়ে এক গ্লাস জলে এক রাত ভিজিয়ে রাখবেন। পরদিন বীজগুলি বেটে নিয়ে একটা পেস্ট বানাবেন। সেই পেস্টটা ভাল করে মাথায় লাগিয়ে ৪০ মিনিট রেখে দিয়ে ধুয়ে নেবেন। টানা একমাস, প্রতিদিন এই মিশ্রনটি মাথায় লাগালে চুল পড়া তো কমবেই, সেই সঙ্গে মাথা ভর্তি চুলের স্বপ্নও পূরণ হবে।

৪. নিম
অনেক সময় আমাদের অজান্তেই মাথার ত্বকে হওয়া সংক্রমণ এমন আকার ধারণ করে যে চুল পড়ার হার মারাত্মক বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে নিমকে কাজে লাগালে দারুন উপকার মেলে। কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ইনফেকশন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

কীভাবে নিম পাতাকে কাজে লাগাতে হবে?
চার কাপ পানিতে পরিমাণ মতো নিম পাতা নিয়ে ফোটাতে হবে প্রথমে। তারপর পানিটা ঠাণ্ডা করে সেই পানিটা ভাল করে মাথার ত্বকে লাগাতে হবে। এমনটা কয়েকদিন করলেই দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করেছে। তবে গোসলের আগে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটিকে কাজে লাগাবেন না, বরং শ্যাম্পু করার পর লাগালে বেশি উপকার পাবেন।

৫. তেল ম্যাসেজ
চুল পড়া আটকাতে প্রতিদিন তেল ম্যাসেজ করাটা জরুরি। এমনটা করলে স্কাল্পে রক্ত প্রবাহ খুব বেড়ে যায়। ফলে চুলের গোড়া আরও শক্তপোক্ত হয়। আর একবার চুলের গোড়া মজবুত হয়ে গেলে চুল পড়াও স্বাভাবিক ভাবে কমে যায়। এক্ষেত্রে নারকেল তেল, বাদাম তেল, অলিভ অয়েল অথবা আমলার তেল ব্যবহার করতে পারেন।

৬. পেঁয়াজের রস
এতে থাকা সালফার হেয়ার ফলিকেলে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দিয়ে নিমেষে চুল পড়া কমিয়ে ফেলে। তবে এখানেই শেষ নয়, পেঁয়াজের রসে রয়েছে বিপুল পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ, যা স্কাল্পে ঘর বেঁধে থাকা জীবাণুদের মেরে ফেলে। ফলে স্কাল্প ইনফেকশনের সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়ার অশঙ্কাও হ্রাস পায়।

কীভাবে চুলে লাগাবেন পেঁয়াজের রস?
১ টা পেয়াজ থেকে রস সংগ্রহ করে নিন। তারপর সেই রস সরাসরি মাথায় লাগিয়ে মাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করে নিন। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে ২-৩ বার এই পদ্ধতিতে চুলের পরিচর্যা করলে ফল পাবেন একেবারে হাতে-নাতে।

৭. আমলকি
চুল পড়া আটকানোর পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধিতেও আমলকি নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। কারণ এতে উপস্থিত ভিটামিন সি চুলের পুষ্টির ঘাটতি দূর করে, সেই সঙ্গে স্কাল্পের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। ফলে চুল পড়ার প্রবণতা কমে। প্রসঙ্গত, দেহে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি দেখা দিলে চুল পড়া বেড়ে যায়। তাই তো এই ভিটামনিটির ঘাটতি যেন কখনো না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রথমে ১ চামচ আমলকির রসের সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণটি ভাল করে চুলে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিয়ে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে।