দলিল জালিয়াতি করে অন্যের সম্পত্তি দখল এবং পরে সেটি নিয়ে আদালতে মামলা-মোকদ্দমা করার বহু ঘটনা আমাদের সমাজে দেখা যায়।
জাল দলিল চেনার উপায় কিংবা একটি দলিলের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের উপায় সম্পকের্ অজ্ঞতা এবং চিহ্নিত জাল দলিলের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকারের বিষয়টি সম্পকের্ না জানার ফলে অনেকেই অধিকারবঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রতারকেরা জমিজমার জাল দলিল সৃষ্টি করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। কীভাবে দলিল জাল হতে পারে, জেনে রাখুন এ সম্পর্কে। দেখা যায়, প্রকৃত নয় কিন্তু মালিক সেজে কাউকে মালিক বানিয়ে জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে নেয়।
সহ-শরিকদের অজান্তে ভুয়া বণ্টননামা করে দলিল জাল করতেও দেখা যায় বণ্টননামার ক্ষেত্রে। দলিল জালের সম্ভাবনা থাকে তখনই যখন আদালত থেকে বণ্টননামা সম্পন্ন করা হয় না। স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা।
ষামাজা করে এবং ওভাররাইটিং বা কাটাছেঁড়া করেও দলিল জাল করার ঘটনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে সমাজে। আবার মূল তারিখ ঠিক রেখে দলিলের বিষয়বস্তু জাল করতেও দেখা যাচ্ছে। মালিক বিদেশে থাকলে মূল দলিল থেকে জালিয়াতিও করা হচ্ছে।
জাল দলিল চেনার উপায়:
১. ভলিউডেমর তথ্য:
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে লেখা হয়ে থাকে। কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সাল মিলিয়ে দেখতে হবে। এজন্য নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হবে। এতে দলিলটির যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।
২. স্বাক্ষর যাচাই:
অনেক সময় স্বাক্ষর জালিয়াতি করে দলিলদাতা বা গ্রহীতার সাজা হয়। এক্ষেত্রে স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করিয়ে নেয়া যেতে পারে। এছাড়া ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করেও জালিয়াতি নির্ণয় করা যায়।
খেয়াল রাখতে হবে, অনেক আগের দলিলে আগের চিহ্নিত কিছু সিল ব্যবহারই থাকে। আগের দলিল কিন্তু সিল যদি নতুন হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, দলিলটি জাল হতে পারে। একই সঙ্গে তারিখটিও ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ কোনো সরকারি বন্ধের দিন থাকলে সন্দেহের অবকাশ থাকবে। অনেক সময় অর্পিত সম্পত্তি বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়।
৩. মূল মালিক শনাক্ত:
এক জমির একাধিক মালিকের নামে করা থাকলে ধরে নিতে হবে দলিলটি জাল হতে পারে। এক্ষেত্রে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মূল মালিক কে, তা নির্ণয় করতে হবে।
৪. নামজারি:
সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে জমির মিউটেশন বা নামজারি সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না, সেটা সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি দেখা যায়, সিএস জরিপের সঙ্গে বিক্রেতার খতিয়ানের কোনো গরমিল আছে, তাহলে বুঝতে হবে, কোনো জটিলতা আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, জরিপ খতিয়ানে জমির পরিমাণ পরবর্তী সময়ে যতবার বিক্রি হয়েছে, তার সঙ্গে জমির পরিমাণ মিল আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা। দাগ নম্বর, ঠিকানা এসব ঠিক আছে কি না, এসব যাচাই করতে হবে।
৫. আমমোক্তারনামা:
সম্প্রতি কোনো আমমোক্তারনামা দলিল থাকলে তাতে উভয় পক্ষের ছবি ব্যবহার হয়েছে কি না যাচাই করতে হবে।
৬. তারিখ যাচাই:
কোনো দান করা জমি হলে দলিলে সম্পাদনের তারিখ দেখে কবে জমিতে গ্রহীতা দখলে গেছে তা যাচাই করতে হবে। দলিলটি রেজিস্ট্রি করা কি না এবং দলিলদাতার সঙ্গে গ্রহীতার সম্পর্ক কী, তা যাচাই করতে হবে।
৭. লেখক যাচাই:
সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া কোনো বিক্রীত দলিলের দলিল লেখকের নাম ঠিকানা জেনে সরেজমিন কথা বলে নেয়া দরকার।
৮. মালিকানা যাচাই:
জমির স্বত্ব কী বা মালিকানা যাচাই করতে হবে। বিক্রেতার কাছ থেকে সব দলিল, বিশেষ করে ভায়া দলিল চেয়ে নিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানতে হবে সব দলিলের ক্রমিক নম্বর, দলিল নম্বর ঠিক আছে কি না।
৯. সিল-স্ট্যাম্প যাচাই:
দলিল সম্পাদনের সময় ব্যবহৃত স্ট্যাম্পের পেছনে কোন ভেন্ডার থেকে স্ট্যাম্প কেনা হয়েছে এবং কার নামে কেনা হয়েছে খেয়াল রাখুন। প্রতিটি স্ট্যাম্পের পেছনে একটি ক্রমিক নম্বর উল্লেখ থাকে। এ নম্বরটি ঠিক আছে কি না, প্রয়োজনে স্ট্যাম্প বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করে যাচাই করে নিন।
ভূমি বা জমির পরিমাপ পদ্ধতি
ভূমি পরিমাপের জন্য Standard Measurement যা “সরকারি মাপ” বলে যা পরিচিত, তার জন্য নিন্ম পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এই পরিমাপ সারাদেশে সর্বজন গৃহীত।
১. ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক
২. কাঠা
৩. বিঘা এবং
৮. একর
দেশীয় প্রচলিত মাপ-ঝোঁক বা আঞ্চলিক প্রচলিত পরিমাপ
সরকারি ভাবে ভূমির পরিমাপ একর বা শতক পদ্ধতিতে করা হয়। এবং একর শতকের এই মাপ সমগ্র দেশে অভিন্ন। কিন্তু অঞ্চলভেদে বিভিন্ন প্রকারের মাপ ঝোক প্রচলন আছে। শুধু তাই নয়, এক অঞ্চলের সাথে অন্য অঞ্চলের পরিমাপের এককের নামের সাদৃশ্য থাকলেও আয়তনের ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণত এগুলো হলো কানি-গন্ডা বা বিঘা-কাঠা নামে পরিচিত।
কাঠা ও বিঘার মাপ
১ বিঘা = ২০ কাঠা = (৮০ হাত×৮০ হাত) ৬৪০০ বর্গহাত
১ কাঠা = ১৬ ছটাক
১ ছটাক = ২০ গন্ডা
১ গন্ডা = ১ শতক
কানি হিসাবের মাপ
কাচ্চা কানিঃ ৪০ শতকে এক কাচ্চা কানি। কাচ্চা কানি ৪০ শতকে হয় বলে একে ৪০ শতকের কানিও বলা হয়।
সাই কানিঃ এই কানি কোথাও ১২০ শতকে ধরা হয়। আবার কোথাও কোথাও ১৬০ শতকেও ধরা হয়।
এক পরিমাপ থেকে অন্য পরিমাপ তুলনা [শতাংশ ও একরের পরিমাণ বর্গগজ/বর্গফুট অনুযায়ী]
১ একর = ৪,৮৪০ বর্গগজ = ৪৩,৫৬০ বর্গফুট
১ বিঘা = ১,৬১৩ বর্গগজ = ১৪,৫২০বর্গফুট
১ কাঠা = ৮০.১৬ বর্গগজ = ৭২১.৪৬ বর্গফুট
১ শতাংশ = ৪৮.৪০ বর্গগজ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট
১ ছটাক = ৫.০১ বর্গগজ = ৪৫.০৯ বর্গফুট = ২০ বর্গহাত
১ গজ = ৩ ফুট
১ ফুট = ১২ ইঞ্চি
১ হাত (প্রামাণ সাইজ) = ১৮ ইঞ্চি ফুট
টিকা
ভূমি যে কোন সাইজের হোক না কেন ভূমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে যদি ৪৮৪০ বর্গগজ হয় তাহলে এটা ১.০০ একর (এক একর) হবে। যেমনঃ ভূমির দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ। সুতরাং ২২০ গজ×২২ গজ= ৪৮৪০ বর্গগজ।
মিটার থেকে ফুট পরিমাপ
১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার = ২৫.৪ মিলিমিটার
১ মিলিমিটার = ০.০৩৯৩৭ ইঞ্চি (প্রায়)
১ সেন্টিমিটার = ০.৩৯৩৭ ইঞ্চি (প্রায়)
১ মিটার = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি (প্রায়) = ৩.২৮ ফুট (প্রায়) = ১.০৯৩ গজ (প্রায়)
১ কিলোমিটার = ০.৬২১৩৭১ মাইল = ১০০০ মিটার = ১০৯৩.৬১ গজ (প্রায়)
১ মাইল = ১.৬০৯৩৪ কিলোমিটার = ১৬০৯.৩৪ মিটার = ১৭৬০ গজ
২ কিলোমিটার = ১.২৪২৭৪ মাইল = সোয়া এক মাইল
পৌন এক (০.৭৫) মাইল = ১৩২০ গজ
আধা (০.৫০) মাইল = ৮৮০ গজ
পোয়া (০.২৫) মাইল = ৪৪০ গজ
১ বর্গ মিটার = ১০.৭৬ বর্গফুট (প্রায়)
১ হেক্টর = ২.৪৭ একর (প্রায়)
কানি গন্ডার সাথে বিভিন্ন প্রকারের পরিমাপের তুলনা
২ কানি ১০ গন্ডা (৪০ শতকের কানিতে) = ১ একর
১ কানি = ১৬১৯ বর্গমিটার = ১৯৩৬ বর্গগজ = ১৭২৮০ বর্গফুট
১ কানি = ১০ বর্গ চেইন = ৪০ বর্গ লিঙ্ক
১ একর = ১০০ শতক
১ একর = ৪,০৪৭ বর্গমিটার
১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক = ৬০.৫ কাঠা
১ শতক = ১ গন্ডা বা ৪৩২.৬ বর্গফুট
কাঠা, বিঘা ও একরের মাপ
১ একর = ৩.০৩০৩০৩০৩ বিঘা
১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক = ৬০.৫ কাঠা = ১০০ শতাংশ
১ বিঘা = ২০ কাঠা = ৩৩ শতাংশ
১ কাঠা = ১৬ ছটাক = ১৬৫ অযুতাংশ
১ শতাংশ = ১০০ অযুতাংশ
টিকা
একশত শতাংশ বা এক হাজার সহস্রাংশ বা দশ হাজার অযুতাংশ= ১.০০ (এক) একর। দশমিক বিন্দুর (.) পরে চার অঙ্ক হলে অযুতাংশ পড়তে হবে।
এয়র হেক্টর হিসাব
১ হেক্টর = ১০,০০০ বর্গমিটার
১ হেক্টর = ২.৪৭ একর
১ হেক্টর = ৭.৪৭ বিঘা
১ হেক্টর = ১০০ এয়র
বিঘা-কাঠার হিসাব থেকে ফুটের মাপ
১ বিঘা = (৮০ হাত×৮০ হাত) ৬৪০০ বর্গহাত
১ বিঘা = ৩৩,০০০ বর্গলিঙ্ক
১ বিঘা = ১৪,৪০০ বর্গফুট
১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট
১ ছটাক = ৪৫ বর্গফুট