জেনে নিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কেন ঢ্যাঁড়স খাবেন ?

1616

অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীরাই তাদের শরীর নিয়ে আতঙ্কিত থাকেন। খাবারে বারণ, নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়া-এমন নানা কারণে তারা সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকেন। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঢ্যাঁড়সের খাদ্যগুণই সমাধান করতে পারে ডায়াবেটিস। তাই রোগটি নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ঢ্যাঁড়স রাখুন।

এবার জেনে নিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপনি কেন ঢ্যাঁড়স খাবেন-

অ্যান্টিডায়াবেটিক যুক্ত খাবার-

এই নামেই বিজ্ঞানী মহলে খ্যাতি পেয়েছে ঢ্যাঁড়স। ২০১১ সালে কিছু বিজ্ঞানী একটি পরীক্ষার জন্য কয়েকটি ইঁদুরের সুগার লেভেল কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেন। রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি থাকাকালীন তাদের খেতে দেওয়া হয় ঢ্যাঁড়সের বীজ, যা খাওয়ার পর অবিশ্বাস্যভাবে কমে যায় সুগারের মাত্রা।

প্রতি ১০০ গ্রাম ঢ্যাঁড়সে শক্তি পাওয়া যায় ৩৩ কিলোক্যালরি। এই কারণেই এই খাবারকে অ্যান্টিডায়াবেটিক খাবার বলা হয়ে থাকে। সাধারণত খাওয়া-দাওয়ার পর আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু ঢ্যাঁড়স খেলে এমন কিছু ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ডায়াবেটিসের আগের স্টেজ অথবা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত-সবাই ঢ্যাঁড়স খেয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‍যুক্ত খাবার-

দুশ্চিন্তার আধিক্যের জন্য ডায়াবেটিস রোগ চেপে বসে। অত্যাধিক কাজের চাপ থেকে তা আরও বেড়ে যায়। এমনকি স্ট্রেস থেকে রক্তে সুগারের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই দুশ্চিন্তা ও অত্যধিক মানসিক চাপ থেক রেহাই একান্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ক্ষেত্রেও ঢ্যাঁড়সের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে কমাতে সাহায্য করে। এই স্ট্রেস কমলে আমাদের রক্তে সুগারের মাত্রা সহজে ওঠানামা করতে পারে না।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে-

ঢ্যাঁড়সের রয়েছে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা। রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। হার্টের রোগের সমস্যা ও ডায়াবেটিস মিলে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে যেকোনো রোগীর। তাই ‌সুগারের মাত্রা ঠিক রাখার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ।

ঢ্যাঁড়সে কোনো রকম স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা কোলেস্টেরল থাকে না। ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা বরং কমিয়ে স্বাভাবিকের মধ্যে রাখে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টই কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

ক্লান্তি দূর করে-

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য কাজের ক্লান্তি দূর করা একান্ত প্রয়োজন। আর তার সমাধান লুকিয়ে আছে ঢ্যাঁড়সে। এটি ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে, যা শরীরকে সচল ও সতেজ রাখতে অত্যন্ত প্রয়োজন।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার-

ঢ্যাঁড়সে আছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার। এ ছাড়া এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ডায়েটরি ফাইবার খিদে মেটানো ও খাবার ঠিকঠাক হজম করা-দুটোতেই সাহায্য করে।

ঢ্যাঁড়স রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি একরাত কেটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই পানিও খাওয়া যায়। এতে ঢ্যাঁড়সের সমস্ত গুণই থাকে। তবে না ধুয়ে ঢ্যাঁড়স কখনোই খাওয়া ভালো নয়, এর বাইরের থাকা জীবাণু খাদ্যনালীতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

বিজ্ঞানীদের পরীক্ষার আগেও ঢ্যাঁড়সের বীজ শুকিয়ে খাওয়া হতো ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে।তাই চিকিৎসকের ওষুধ ছাড়াই শুধু ঢ্যাঁড়স খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন আপনার সুগার লেভেল।