জেনে নিন পেট পরিষ্কার রাখার ৭ উপায়

1644

ভালো মানুষ হয়ে বাঁচার জন্য যেমন মন পরিষ্কার রাখা জরুরি তেমনই সুস্থভাবে বাঁচার জন্য পেট পরিষ্কার রাখাও জরুরি। পেটে গোলমাল, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির প্রভাব পড়ে আমাদের দৈনন্দিন কাজে-কর্মেও।

কারণ এসবের কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে, কাজে মন দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। নানারকম অনিয়ম, নিয়ম মেনে না খাওয়া ইত্যাদি অনেক কারণে পেটে সমস্যা বাঁধতে পারে।

তাই জেনে নিন পেট পরিষ্কার রাখার সহজ ৭ উপায়-

প্রচুর পানি পান করুন: পেট পরিষ্কার রাখার প্রথম শর্তই হলো হজমশক্তি ঠিক থাকা। তাই হজমশক্তি ভালো রাখতে প্রচুর পানি পান করুন। প্রতিদিন নিয়ম মেনে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। খাদ্য তালিকায় সেসব সবজি ও ফল রাখুন যাতে পানির পরিমাণ বেশি।

যেমন লাউ, কাঁচা টমেটো, তরমুজ, পেঁপে, আপেল ইত্যাদি। এর থেকেও শরীরে পানির জোগান সঠিক পরিমাণ হয়। ফলে পাচনক্রিয়া সক্রিয় থাকে। খাবার ঠিক মতো হজম হয়। পানি পানের এই অভ্যাস কয়েক সপ্তাহ ধরে মেনে চললে আপনার পেটের সমস্যা কমে যাবে। পেট একদম পরিষ্কার থাকবে।

অ্যালোভেরা জুস: অ্যালোভেরার রস জুস হিসেবে খেলে অন্ত্রে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। গবেষণা থেকে জানা গেছে যে অন্ত্রে থাকা পানি মল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় তবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অ্যালোভেরার জুস যোগ করুন। অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী শরীরের নানা অংশের জন্য উপকারী। পেটের সাথে সাথে ত্বক, চুলের জন্যও এটি খেতে পারেন।

মৌরি ও জিরার গুঁড়া: ২ চা চামচ মৌরি ও ২ চামচ জিরার গুঁড়ো নিন। হালকা আঁচে কড়াইয়ে নেড়ে নিন। তারপর গুঁড়া করে একটি পাত্রে রেখে দিন। প্রতি ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অন্তর অল্প অল্প করে খান।

ইসবগুল: ইসবগুল পেটে পরিষ্কার করে অনেকেই জানেন। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ইসবগুল খাওয়ার অভ্যাস করুন। দেখবেন সকাল সকাল পেট হালকা হয়ে যাবে চোখের নিমেষে।

তুলসি পাতা: সকালে তুলসি গাছের কয়েকটি পাতা চিবিয়ে খালি পেটে খান। এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং হজমশক্তি বাড়াবে।

তিসি: তিসির বীজ পিষে এক চামচ পাউডার তৈরি করুন। একগ্লাস পানিতে মিশিয়ে সকালের খাবারের আধা ঘণ্টা আগে পান করুন। আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার পান করুন।

জোয়ান: জোয়ান খাওয়া পেটের জন্য খুবই ভালো। একটি বোতলে জোয়ান ভরে বিছানার পাশে রেখে দিন। রোজ রাতে এক চিমটি জোয়ান খেয়ে এক গ্লাস পানি পান করুন। এতে গ্যাসের সমস্যা থাকলে তা সকালে উঠলেই হালকা হয়ে যাবে।

যেসব কারণে পেটে মেদ জমে….

গড়নে মোটা মানুষের পেটে মেদ জমলে ততটা দুঃখ হয় না, যতটা চিকন মানুষের পেটে মেদ জমলে হয়। সারা শরীর টিঙটিঙে কিন্তু পেটের কাছে পোটলার মতো মেদ! পেটে ফ্যাট জমার স্পষ্ট কতগুলো কারণ আছে। তাই আক্ষেপ কিংবা মন খারাপ না করে নজর দিন এর কারণগুলোর দিকে।

ডায়েট আর এক্সারসাইজের নিয়মকানুন মেনে ওজন কমাতে আরম্ভ করলে আপনার পেটের ফ্যাটও কমবে। যারা চিকন গড়ন নিয়েও পেটে চর্বির পরত জমিয়ে ফেলেছেন, তারাও ডায়েটিং আর ব্যায়ামের মতো বিষয়গুলোকে সিরিয়াসভাবে নিন। তা না হলে সমস্যা দিন দিন বাড়বে।

ট্রান্স ফ্যাট: পেটের মেদ বৃদ্ধির একটি কারণ হলো আপনি যা খাচ্ছেন, তার মধ্যে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। মানে, প্যাকেটের চিড়াভাজা, মাফিন, চিপস, বেকড খাবার- সবকিছুর মধ্যেই ট্রান্স ফ্যাট থাকে। থাকে বিস্কুট আর কুকিজেও। অতিরিক্ত প্রসেসড চিজ ইত্যাদি থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

খাবারে অতিরিক্ত চিনি: প্রতিদিন মিষ্টি না খেলেও আপনার খাদ্যতালিকায় বড়সড় সমস্যা আছে। খুঁটিয়ে দেখুন কোথায় সমস্যা। রোজ ফ্রুট জুস খেলে, ক্ষুধা পেলেই বিস্কুটের দিকে হাত বাড়ালে, মুড়ির সঙ্গে একটু চানাচুর মিশিয়ে খেলে, ব্রেকফাস্টে প্রসেসড কর্ন বা হুইট ফ্লেক্স খেলে সেসব বন্ধ করতে হবে। আপনার খাদ্যতালিকার অতিরিক্ত চিনিই সব সমস্যার কারণ।

যথেষ্ট প্রোটিন ও ফাইবার না থাকা: আপনি আমিষ খান বা নিরামিষ, প্রোটিনের পরিমাণে ঘাটতি হওয়ার কোনো কারণ নেই। নিরামিষভোজীরা বেশি করে ডাল, ছানা, সোয়াবিন ইত্যাদি খান। যারা আমিষ পছন্দ করেন, তারা মাছ, ডিম, চিকেনের উপর আস্থা রাখুন। প্রোটিন আপনার পেট ভরিয়ে রাখবে বেশিক্ষণ, অল্পতেই ক্ষুধা পাবে না। সেইসঙ্গে বাড়াতে হবে ফল-শাকসবজি খাওয়া। তাতে যথেষ্ট ফাইবার মিলবে।

পাচনতন্ত্রে অপকারি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেশি: আপনার পাচনতন্ত্রে, বিশেষ করে কোলনে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে, তার পোশাকি নাম হচ্ছে ‘গাট ফ্লোরা’ বা ‘মাইক্রোবায়োম’। পাচনতন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেশি না হলে পেটে মেদ জমতে পারে। খাদ্যতালিকায় প্রোবায়োটিকের পরিমাণ বাড়িয়ে ও সুষম খাবার খেলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

ঘুম কম হওয়া: দিনে অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে, তার চেয়ে কম বিশ্রাম পেলে কিন্তু পেটে মেদ জমতে বাধ্য। রোজ নির্দিষ্ট সময় ঘুমোতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করুন।