বাংলাদেশ বিমান এমন কেন করল, প্রশ্ন আফগান তরুণীর

1624

ঘটনা বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে দশটার। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমান কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন ২৪ বছর বয়সী আফগান তরুণী সেফারি আহমেদি হোসনা।

অনেকেই দেখে চলে যাচ্ছেন। কান্নার কারণ কি জানতে চাইলে হোসনা নামের ওই তরুণী জানালেন, বিমানের ঢাকা আবুধাবী হয়ে কাবুলের টিকিট কেটেছিলেন অনলাইনে, কিন্তু বিমান তার যাত্রা স্থগিত (অফলোড) করে দিয়েছে।

কেন এটি করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিমানের কেউ সদুত্তর দিতে পারেনি। তাৎক্ষণিকভাবে জিএম এবং ডিসিএসকে ফোন করে ঘটনাটি জানান সাংবাদিক আজাদ সুলায়মান।

ঘটনা শোনার পর শুরু হয় দৌড় ঝাঁপ। ততোক্ষণে এগারটায় আবুধাবির ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে যাবার খবর শুনে আফগান তরুণী হোসনা ধপাস করে দাঁড়ানো থেকে পড়ে যান। তাকে ধরে সেবা শুশ্রূষা করেন ফ্লোরা নামের এক কেবিন ক্রু।

হোসনা অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ বিমান তাকে এমন বিপদে ফেলেছে। সাংবাদিক আজাদ ফেসবুকে ঘটনা তুলে ধরে লেখেন, বিমানের কর্মকর্তা শাহাজাহান ওই সময় আশ্বাস দেন- পরের ফ্লাইটে অথবা অন্য কোনো এয়ারে তাকে পাঠানো হবে।

হোসনা নামের তরুণী তখন এয়ারপোর্ট ওয়েলফার রেস্টুরেন্টে অবস্থান করেছিল শঙ্কা আর অনিশ্চয়তায নিয়ে। এদিকে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে শুক্রবারই।

সব মিলিয়ে এমন বিপদে হোসনার প্রশ্ন, বিমান কেন এমন করল?

afgan

রাতে এয়ারপোর্টে উপস্থিত অন্যান্য যাত্রীরা ঘটনা শুনে হতাশা ব্যক্ত করেন। সেই সাথে ভিসার মেয়াদ শেষ এমন খবরে অন্যান্য যাত্রীদের বেশ চিন্তিত দেখা যায়। কোনো কোনো যাত্রী বিমানের এমন কাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেন। 

এয়ারপোর্ট থেকে মধ্যরাতে তাকে হোটেলে পাঠিয়ে দেন উপস্থিত বিমানের কর্মকর্তারা। এয়ারপোর্ট বিমান অফিসের একজন নাম প্রকাশ না করে জানান, ম্যানেজারসহ অন্য যারা ছিল খাবার শেষ হলে তাকে হোটেলে পাঠাল এইটুকুই জানি। আর শুনেছি একটা ফ্লাইটে পাঠানোর চেষ্টা করছে।

শুক্রবার সকালে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকারের সাথে যোগাযোগ করেও মোবাইল বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে এয়ারলাইনস সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি ঢাকা মেইলকে জানান, পাসপোর্ট বা ভিসা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা থাকলে এ ধরনের অফলোড করা হয়। 

ঢাকা মেইলের হাতে আসা আফগান তরুণীর পাসপোর্টের কপি দেখে জানা যায়, ওই তরুণীর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১১ দিন আগে। ১ আগস্ট ওই তরুণীর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলেও সে নির্দিষ্ট সময়ে কেন যায়নি সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এয়ারলাইনস সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশি নাগরিক কোনো জটিলতায় পড়লে বা পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে, চুরি হলে, মেয়াদ শেষ হলে উপযুক্ত কারণ অবহিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।

এক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের পর দূতাবাস বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবহিত হয়েছে কিনা এই ধরনের অনুমতি নিয়েছিল কিনা সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১১ দিনে আগেই ওই যাত্রীর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া, তার আবুধাবির ভিসা ১২ তারিখ পর্যন্ত ছিল।

তিনি বলেন, পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকলেও অনেক সময় বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশি যাত্রীরা নিজ দেশে ফিরতে পারেন। তবে ওই তরুণী আবুধাবি যাবেন। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের ওই যাত্রীকে বিমান বহন করেনি। বর্তমানে ওই তরুণী বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি আবাসিক হোটেলে রয়েছেন। একমাত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই তিনি দেশত্যাগ করতে পারবেন।