গাজীপুরের শ্রীপুরে নেশার টাকার জন্য মা ও তিন সন্তানকে গলা কেটে হ’ত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। বুধবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, কেউ রিকশাচালক, কেউ শ্রমিক, কেউবা পুরোনো জিনিসপত্র কুড়িয়ে (ভাঙ্গারি) বিক্রি করে। তবে তারা সবাই মা’দ’ক’সে’বী হওয়ার পাশাপাশি ছোটখাটো চু’রি ও ছি’ন’তা’ই’ও করত। করোনাভা’ই’রাসের কারণে সব বন্ধ হওয়ায় রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময়ই তারা জানতে পারে, পাড়ার মালয়েশিয়া প্রবাসী রেজওয়ান হোসেন কাজলের বাড়িতে হুন্ডির মাধ্যমে আসা ২০-২২ লাখ টাকা আছে। ধারণা মাত্রই ডা’কা’তি’র পরিকল্পনা করে তারা। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে ভুল ভাঙে তাদের।
৩০ হাজার টাকা ও কিছু স্বর্ণালঙ্কার ছাড়া কিছুই পায়নি চক্রটি। ধ’র্ষ’ণ করে মা ও দুই মেয়েকে। চিনে ফেলায় পরে মাসহ দুই মেয়ে ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে হ’ত্যা করে তারা।
এদিকে বুধবার (২৯ এপ্রিল) মা ও তিন সন্তানসহ চাঞ্চল্যকর চার খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরো পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- কাজিম উদ্দিন (৫০), মো. হানিফ (৩২), মো. বশির (২৬), মো. হেলাল (৩০), ও এলাহি মিয়া (৩৫)।
গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে এক প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা (৩৮), দুই মেয়ে নূরা (১৭), হাওয়ারিন (১৩) এবং এক ছেলে ফাদিলের (৮) গ’লা কাটা কাটা ম’র’দে’হ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রবিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে শ্রীপুরের আদাবর এলাকা থেকে মূল হোতা পারভেজকে গ্রে’ফতার করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পারভেজের (১৭) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের বাড়ি থেকে লুট করা মালামাল ও আসামিদের পরিধেয় বস্ত্র (র’ক্ত’মা’খা) যথাক্রমে নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি হলুদ রঙের গেঞ্জি, একটি জিন্স প্যান্ট, তিনটি লুঙ্গি এবং একটি আংটি উদ্ধার করা হয়।
পারভেজ র্যাবের হাতে গ্রেফতার কাজিম উদ্দীনের ছেলে। ঘটনার সময় কাজলের বড় মেয়েকে বাবা ও ছেলে মিলে ধ’র্ষ’ণ করেছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রে’ফ’তা’র’কৃ’ত’রা হ’ত্যা’কা’ণ্ডে’র বিষয়টি স্বীকার করেছেন জানিয়ে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, এরা সবাই মা’দ’ক’সে’বী। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চু’রি, ছি’ন’তা’ই’স’হ নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সকলেই জুয়াড়ি এবং ভিকটিমের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত জুয়া, মা’দ’ক’সে’ব’ন ও আড্ডা দিত। এছাড়া ভিকটিমদের তারা নানাভাবে হয়রানি করত।
তিনি জানান, কাজিমের ছেলে পারভেজ ধ’র্ষ’ণ’স’হ হ’ত্যা মামলার আসামি। আনুমানিক দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে গোপনে ভিকটিমের বাড়ির খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গৃহকর্মী ধরেছিল।
যেভাবে ডাকাতি হয়
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ এপ্রিল রাতে প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। এছাড়া হানিফ মাদারগাছ এবং পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিঁড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ির পেছনের ছোট গেট খুলে দেয়া হয়। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি এবং আরো কয়েকজন পেছনের গেট দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন।
কাজিম এবং হেলালসহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢুকে এবং কাজিমের হাতে থাকা ধারালো অ’স্ত্র দিয়ে ফাতেমাকে মে’রে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাগুলো দিতে বলেন। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানান।
পরে ফাতেমা তার রুমের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচে চাপা দেয়া ৩০ হাজার টাকা বের করে দেন। পরবর্তীতে ফাতেমার স্বর্ণালঙ্কারগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামিরা।
অন্যান্য রুমেও লুটতরাজ চলতে থাকে। আসামি বশির ও এলাহিসহ আরো একজন ভিকটিম নুরাকে তাদের হাতে থাকা ধারালো অ’স্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভ’য় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেন।
তাকেও পালাক্রমে ধ’র্ষ’ণ করা হয়। এছাড়া আসামি বশিরসহ আরো একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়ারিনকে পর্যায়ক্রমে ধ’র্ষ’ণ করে। আসামি পারভেজও হ’ত্যা’কা’ণ্ড ও ধ’র্ষ’ণে অংশ নেয়। জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় আরো ৩ থেকে ৪ জনের নাম এসেছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রে’ফ’তা’র’রা জানায়, ফাতেমা ও তার মেয়েরা তাদের কয়েকজনকে চিনে ফেলায় সবাইকে হ’ত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে আসামিরা ধারালো অ’স্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কু’পি’য়ে ও গলা কে’টে ভিকটিমদের মৃ’ত্যু নিশ্চিত করে। প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকে হ’ত্যা করা নিয়ে আসামিদের ভেতর দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সংশয় তৈরি হয়। কিন্তু কোনো প্রকার সাক্ষী যেন না থাকে সে জন্য প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকেও হ’ত্যা করা হয়।