ফোন ভিজলে যা করবেন- এখন চলছে বৃষ্টির মৌসুম তাই যখন তখন বৃষ্টির পানিতে ভিজে যেতে পারে মোবাইল ফোন, আপনার প্রিয় মোবাইল ফোনটি পানিতে ভিজে গেলে চিন্তার কারণ নেই।
পানিতে ভিজে গেলে যদি দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে সাধের মোবাইল ফোনটিকে অকেজো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। বৃষ্টির পানিতে মোবাইল ফোনটি ভিজে গেলে কিছু নিয়ম মেনে তারপর তা ব্যবহার করতে হবে।
কী সে নিয়ম গুলো? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ফোন ভিজলে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না।
ফোন বন্ধ করুন- স্মার্টফোনই হোক আর ফিচার ফোনই হোক, জরুরি হলেও ভেজা স্মার্টফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ফোন ভিজে গেলে তা অফ করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। এর কারণ হলো ফোন চালু থাকলে এর ভেতরের সার্কিটগুলো সক্রিয় থাকে যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চলাচল করে। সেখানে পানি প্রবেশ করলে শর্ট সার্কিট হয়ে পুরো মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
আর এ রকমটি হলে ফোনটি একেবারেই অচল হয়ে যাবে। তবে ফোনের ডিসপ্লে বন্ধ থাকা অবস্থায় যদি পানিতে ভিজে যায়, তাহলে পানি থেকে সরিয়ে প্রথমেই পাওয়ার বাটন চেপে ডিসপ্লে অন করুন এবং এরপর ফোন বন্ধ করুন।
হেয়ার ড্রায়ার- ফোনে ঢোকা পানি দ্রুত শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ হল, হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাসে ভেতরর কমপোনেন্ট সার্কিট গলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ফোনে চার্জ দেওয়া- ভিজে থাকা স্মার্টফোনকে চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আগে মোবাইল ফোনটিকে ভাল করে মুছে নিন। পারলে খোলা হাওয়ায় ১ ঘণ্টা ফেলে রাখুন। এরপর ফের একবার মুছে নিয়ে ফোন চার্জে বসাতে পারেন। ফোন মোছার সময় ব্যাটারিও মুছে নিন। ভেজা অবস্থায় কখনোই দেয়ালে থাকা সকেটের সঙ্গে চার্জার কানেক্ট করে ফোন চার্জে দেওয়া যাবে না। এমনকি হেড ফোনও ব্যবহার করা যাবে না। এতে বিদ্যুতায়িত হওয়ার আশংকা থাকে।
সিম কার্ড- ভেজা অবস্থায় ফোনের সিম কার্ড ট্রে খুলে সিম বের করা উচিত নয়। এতে ফোনের ভিতরে পানি ঢোকার আশংকা থাকে।
মোবাইল ঝাঁকাঝাঁকি- পানি ঢুকলে মোবাইল ফোন ঝাঁকাঝাঁকি করে লাভ নাই। এতে পানি বের হবে না। উল্টো সার্কিটের ভিতরে পানি চলে যেতে পারে। আর বাজারে গেলে যে পলিব্যাগ পান, সেরকম একটা সঙ্গে রাখুন। বৃষ্টির মধ্যে আপনার স্মার্টফোনের রক্ষাকবচ হতে পারে এই পলিব্যাগ।ছাড়াও বাজার থেকে ওয়াটার-প্রুফ মোবাইল ফোনের পাউচ কভার কিনে নিন। বৃষ্টিতে আপনার স্মার্টফোনটিকে এই কভারের মধ্যে ভরে দিন। মোবাইল খারাপ হয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে।
ফোনের ব্যাটারি- ব্যাটারিতে পানি ঢুকেছে কিনা তা জানতে ফোন খোলা যাবে না। ব্যাটারিও সরানো যাবে না। আর বর্ষা আসার আগেই ফোনে থাকা সমস্ত তথ্য ‘ক্লাউড স্টোরেজ’-এ সেভ করে রাখুন। বর্ষায় কোনও ভাবে ফোনে পানি ঢুকলে বেঁচে যেতে পারে আপনার মোবাইলে থাকা তথ্য।
আর ভিজে হাতে টাচ স্ক্রিনে হাত দেবেন না। এতে পানি সোক করে ভিতরে চলে যেতে পারে এবং ‘টাচ স্ক্রিন’ কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।
চাল এবং সিলিকা ব্যবহার করুন- জলীয় পদার্থ শুষে নিতে চাল এবং সিলিকা জেল দারুণ কার্যকরী। মানিব্যাগে সিলিকা জেল রাখুন। সিলিকা জেল যে কোনও জিনিসকে শুকনো রাখতে সাহায্য করে। জিনিসে ময়শ্চার পড়তে দেয় না। এর সঙ্গে জিপ লক করা ছোট প্লাস্টিকের পাউচ রাখুন। বৃষ্টিতে ভেজার উপক্রম হলে, প্লাস্টিকের এই পাউচে সিলিকা জেলের প্যাকেট রেখে মোবাইল ফোনটি ভরে দিন এবং জিপ লক করুন। কোনওভাবে পাউচে পানি ঢুকলেও সিলিকা জেল আপনার স্মার্টফোন শুকনো রাখতে সাহায্য করবে।
আপনার আর্দ্র ফোনটি এক বাটি চালের ভেতর গুঁজে রাখতে পারেন। এতে করে ফোনের ভেতরে থাকা পানি চাল শুষে নেবে। আর ভেতরে একেবারেই পানি থাকবে না। তবে চালের তুলনায় সিলিকা জেল একটু বেশি কার্যকরী। উভয়ক্ষেত্রেই ভাল ফল পেতে চাইলে ২-৩ দিন ধরে চাল কিংবা সিলিকা জেলের মধ্যে ফোনটিকে রাখতে হবে।
যা করণীয়- যদি ফোনের ভেতরের কোন কমপোনেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাহলে এই নিয়ম গুলো মানলে আপনার ফোনটি চালু হবে। আর যদি চালু না হয়, নিজে নিজে ফোনের পানি বের করার চেষ্টা না করে তা টেকনিশিয়ানের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে ফোনটি সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে। একই সঙ্গে টেকনিশিয়ানকে সব সত্যি কথা বলতে হবে।
মনে রাখবেন- সার্ভিস সেন্টারে আনার আগে যদি নিজেই ফোন খোলার চেষ্টা করে থাকেন সেটা টেকনিশিয়ানকে জানাতে হবে। তা না হলে টেকনিশিয়ানের অজান্তেই আপনার ফোনের আরও ক্ষতি হতে পারে, সবাইকে কে ধন্যবাদ।