গর্ভাবস্থা প্রত্যেক প্রসূতির জন্য একদিকে যেমন খুশির কারণ, অন্য দিকে থাকে আশঙ্কা।
আশার কথা, সাধারণ ভাবে শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ গর্ভাবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটে সুষ্ঠু ভাবে। তবে বাকি ৫ থেকে ১০ ভাগ মায়ের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিকতা বা জটিলতা।
এ জন্য চাই প্রসূতিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতা। কারণ, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং চিকিৎসা না হলে মা ও শিশু উভয়ের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং পরবর্তী সময়ের বিপজ্জনক সমস্যাগুলো কখনো কখনো সতর্ক সংকেত ছাড়াই হঠাৎ দেখা দিতে পারে।
তবুও সব দম্পতিকে এবং আত্মীয়স্বজনকে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভের লক্ষণ, বিপদের পূর্বাভাস ও মারাত্মক লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, যেকোনো খারাপ অবস্থার জন্য আগে থেকে মানসিক ও অন্যান্য প্রস্তুতি না থাকলে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে এমন কোনো খাবার খাওয়া ঠিক নয়। তবে এ সময়ে আমরা অনেক ধরনের ফল খেয়ে থাকি। তবে কিছু ফল আছে যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
চিকিৎসকদের মতে, গর্ভাবস্থায় মাছ, মাংস, ডিমের পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় ফল থাকে। তবে কিছু ফল আছে যা ক্ষ.. তির কারণ হতে পারে। এমন কোনো ফল খাওয়া যাবে না। আসুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় যেসব ফল ভুলেও খাবেন না।
আনারস: গর্ভাবস্থায় আনারস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ সময় আনারস খেলে জরায়ুর সংকোচন হয়। ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
আঙুর: গর্ভাবস্থায় আঙুর খেলে মর্নিং সিকনেসের প্রবণতা বাড়ে।এছাড়া ওই মায়েরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।
তেঁতুল: গর্ভাবস্থায় তেঁতুল না খাওয়া ভালো। তেঁতুলে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ কমায়। শরীরে এই হরমোন কমে গেলে জরায়ুর সংকোচন হয়। তখন গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
পেঁপে: পেঁপেতে থাকা ল্যাটেক্স জরায়ুর সংকোচন ঘটায়। ফলে এ সময় গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
কলা: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা অ্যালার্জি থাকলে কলা খাওয়া ঠিক নয়। এতে থাকা কাইটিনেজ উপাদান ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
তরমুজ: তরমুজ শরীরে আর্দ্রতা বজায় রেখে টক্সিন দূর করে। তবে টক্সিন বের হওয়ার সময় গর্ভাবস্থায় ভ্রুণ অতিরিক্ত টক্সিনের সংস্পর্শে এলে তা ক্ষতিকারক।
একজন গর্ভবতী মহিলার কতটা ফল খাওয়া উচিত
আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে ফলের দুই থেকে চারটি পরিবেশন অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি তাদের তাজা, টিনজাত, রস আকারে বা শুকনো খেতে পারেন, কিন্তু যত বেশী সম্ভব তাজা ফল খাবার চেষ্টা করুন। কিছু ফল, যা একটি একক পরিবেশনের সমতুল্য, তারা হল:
আপেল, কলা বা নাশপাতির মতো মাঝারি আকারের একটি একক পরিবেশনের সমতুল্য হবে, যেখানে কিউই, এপ্রিকট বা প্লাম-এর মতো ফল ছোট আকারের দুটি নিলে তা একক পরিবেশনের সমান।
আনারস, তরমুজ বা টিনজাত ফলের মতো ছোট করে কাটা তাজা ফলের এক কাপ।
যদি আপনি রস পছন্দ করেন, তবে ফলের রসের অর্ধেক কাপ একক পরিবেশন হিসাবে বিবেচিত হবে।
আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে ফল যোগ করার জন্য সহজ কৌশল
আপনি আপনার ব্রেকফাস্টে দই বা সিরিয়ালের সঙ্গে কাটা ফল বা হিমায়িত বেরি মিশ্রিত করতে পারেন।
আপনি প্রাক-লাঞ্চ স্ন্যাক হিসাবে সালাদে আপেল, আনারস, আঙ্গুর বা কিসমিসের টুকরা যোগ করতে পারেন।
আপনার যদি ফল কাটানোর সময় না থাকে তবে য়োগার্ট বা দুধের সাথে ফল মিশিয়ে স্মুথি বা শেক বানিয়ে নিতে পারেন।
আপনি ওটমিল, প্যানকেক এবং ওয়াফেল-এ শুকনো বা তাজা ফল যোগ করতে পারেন।
সর্বোত্তম বিকল্পটি হল আপনার নাগালের ও দৃষ্টির মধ্যে ফলের একটি বাটি রাখা যাতে আপনি যখনই ক্ষুধার্ত হবেন একটি ফল নিয়ে খেতে পারেন।
আঙুর এবং স্ট্রবেরির মতো ফল বা শুকনো ফল হাতের কাছে রাখুন, এবং জাঙ্ক খাবারের পরিবর্তে এগুলি দিয়ে স্ন্যাক করুন।
আপনি নিজেও একটি ফ্রুট কেক তৈরি করতে পারেন এবং তাতে কিউই এবং বেরির মতো প্রচুর ফল যোগ করতে পারেন। এটি আপনার খাদ্যে ফল যোগ করার একটি সুস্বাদু উপায়।
এই দারুণ ফলগুলি আপনাকে গর্ভাবস্থার নয় মাস সহজে পেরোতে সাহায্য করতে পারে। সুতরাং, তাদের আপনি হৃদয়ের সাথে জুড়ে নিন এবং একটি সুস্থ গর্ভাবস্থা পান।