২৫ টন সরকারি চালসহ আ’লীগ নেতা আটক !

3905

থামছে না সরকারি চাল চুরি- অ’বৈ’ধ’ভাবে মজুত রাখা সাড়ে ২৫ টন সরকারি চালসহ গোপীনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আল ইসরাইল ওরফে জুবেল (৪৯) কে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর থেকে হাতেনাতে আ’ট’ক করেছে র‌্যাব।

শনিবার রাতে র‌্যাব-৫, জয়পুরহাট ক্যাম্পের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্থানীয় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আটককৃত গোপীনাথপুর ইউনিয়ন নেতা জুবেল জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর মৃ’ত নজির উদ্দিন আহমেদের ছেলে।

র‌্যাব জানায়, গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে র‌্যাব-৫, জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি অপারেশনাল দল শনিবার বিকাল ৫টার দিকে গোপীনাথপুর বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল ইসরাইল ওরফে জুবেলের নিজস্ব গুদামে অ’বৈ’ধ’ভাবে মজুদকৃত বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ২৫ হাজার ৪৪০ কেজি সরকারি চালসহ তাকে হাতেনাতে আ’ট’ক করা হয় ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দকৃত এই চাল বিভিন্ন অ’বৈ’ধ উপায়ে সংগ্রহ করে উচ্চ মূল্যে গোপনে বিক্রির উদ্দেশে নিজ গুদামে মজুত করে রেখেছিলেন বলে আটক জুবেল স্বীকার করেছেন।

কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম মোহাইমেনুর রশিদের নেতৃত্বে আটক জুবেলকে আক্কেলপুর থানায় সোপর্দ করে র‌্যাবের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

থামছে না সরকারি চাল চুরি

সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চুরি থামছে না। দেশের পাঁচ জেলা থেকে আরও ৬৭৩ বস্তা চাল জব্দ করেছে পুলিশ। এসব ঘটনায় একজন ইউপি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা হয়েছে এই পাঁচজনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। আটক আওয়ামী লীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হুশিয়ারির পরও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা, ডিলার ও ব্যবসায়ীরা গরিবদের জন্য বরাদ্দ করা ১০ টাকা মূল্যের এই চাল আত্মসাৎ করছেন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত জব্দ চালের মধ্যে রয়েছে- জামালপুর ও বকশীগঞ্জে ৫২৬ বস্তা, বগুড়ায় ১০২ বস্তা, ভোলার লালমোহনে ১৫ বস্তা, জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ২২ বস্তা ও মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আট বস্তা। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

জামালপুর : জামালপুর সদরের নরুন্দি বাজারে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতার গুদামে অভিযান চালিয়ে ৩২৬ বস্তা চাল জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন এ অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি জানান, সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যর ভিত্তিতে তিনি নরুন্দি বাজারে তুলশীরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তোফার গুদামে অভিযান চালান।

এ সময় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১২৬ বস্তা চাল জব্ধ এবং তোফাজ্জলকে আটক করেন। তোফাজ্জল তুলশীরচর ইউনিয়নের ওএমএস চাল বিক্রির ডিলার। একই সময় নরুন্দি পশ্চিম নয়াপাড়া গ্রামে সদর উপজেলা যুবলীগের সদস্য রানা মিয়া খোকার গুদামে অভিযান চালিয়ে আরও ২০০ বস্তা চাল জব্দ করেন। এ সময় যুবলীগ নেতা রানা মিয়া পালিয়ে যান।

তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দুই স্থান থেকে জব্দ করা সাড়ে ১৭ মেট্রিক টন চাল নরুন্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। জামালপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান স্বপন সাংবাদিকদের জানান, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালসহ আটকের পর তোফাজ্জল হোসেন তোফাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

লালমোহন (ভোলা) : লালমোহনের বদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশ থেকে সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে ১৫ বস্তা চাল জব্দ করে ট্যাগ অফিসার ও পুলিশ। চাল চুরির অভিযোগে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ভাতিজা ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ওমরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে লালমোহন থানার ওসি মীর খায়রুল কবীর।

বুধবার থেকে বদরপুর ইউনিয়নে জেলে পুনর্বাসনের চাল দেয়া হয়। দুই মাসের চাল খাদ্যগুদাম থেকে ছাড় দেয়া হলেও চেয়ারম্যান মো. ফরিদুল হক তালুকদার এক মাসের চাল নিয়ে বিতরণ করেছেন। ১৭১০ জন জেলের মধ্যে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও অধিকাংশ জেলেকেই চাল দেয়া হয়নি। চেয়ারম্যান ও তার ভাতিজার পছন্দের লোকদের চাল দিয়ে অন্য চাল আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চেয়ারম্যান ও তার ভাতিজা ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওমর প্রতিবারই চাল বিতরণের সময় অনিয়ম করে আসছেন। চাল ওজনে কম দেয়াসহ নামে বেনামে চাল নিয়ে বিভিন্নভাবে পরিষদের গুদাম থেকে সরাচ্ছেন তারা।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফরিদুল হক তালুকদার এ ব্যাপারে বলেন, এসব চাল কার্ডধারী জেলেদের। জেলেরা চাল পেয়ে বিক্রি করেছে।

বগুড়া : শিবগঞ্জে ১০২ বস্তা চাল উদ্ধার ও মোস্তাফিজুর রহমান (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিবগঞ্জ থানা পুলিশ শনিবার দুপুরে উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের একটি বাড়ি থেকে চালগুলো উদ্ধার করে। শিবগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, চালগুলো ডিলারের কাছ থেকে কালোবাজারে সংগ্রহ করে অবৈধভাবে বিক্রির জন্য বাড়িতে মজুদ করা হয়।

উপজেলার গণকপাড়া গ্রামের ঠাণ্ডা মিয়ার ছেলে মোস্তাফিজুর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, চালগুলো তার চাচাতো ভাই একই গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে সাইফুল ইসলাম সাজুর। সাজু স্থানীয় ডিলারের কাছ থেকে চালগুলো কিনে এনে তার বাড়িতে রেখেছে। এ ব্যাপারে সন্ধ্যায় পুলিশ বাদী হয়ে দু’জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) : বকশীগঞ্জে ২০০ বস্তা (২৫ কেজি) সরকারি চালসহ নূর কালাম (৪৫) নামে এক চাল ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। কালাম বকশীগঞ্জ পৌর শহরের পাখিমারা এলাকার জমশের আলীর ছেলে। শুক্রবার রাতে পৌর বাজারের ওই ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে চাল উদ্ধার ও তাকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আটক চাল ব্যবসায়ী জানান, প্রতিবেশী শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এই চাল সংগ্রহ করেন তিনি। বকশীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, দু’জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে। মোশারফকে আটকের চেষ্টা চলছে।

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) : ক্ষেতলালে সুহলী বাজারের একটি গুদাম থেকে ১০ টাকা কেজির রেশনের ২২ বস্তা চালসহ ২ ভ্যানচালককে আটক করা হয়েছে। শনিবার ভোরে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পাশে সুহলী গ্রামের এমদাদুল হোসেনের গুদাম থেকে চালগুলো ভ্যানে বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার পথে ক্ষেতলাল থানা পুলিশ তা জব্দ।

এ সময় উপজেলার সুহলী গ্রামের আফজাল হোসেন ও আনারুল ইসলাম নামে দুই ভ্যানচালককে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সুহলী গ্রামের আবদুল মালেকের চাল তারা বাজারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে আবদুল মালেক বলেন, আমি একজন চাল ব্যবসায়ী। আলমপুর ইউনিয়নসহ পাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের হতদরিদ্ররা ক্রয়কৃত রেশনের চাল ব্যবসায়ী হিসেবে আমার কাছে বিক্রি করে।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) : বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির ভাটাউচি গ্রামের শুক্কুর আলীর বাড়ি থেকে শুক্রবার রাতে ৮ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের ডিলার মো. সুলেমান মিয়া ওই বাড়িতে সরকারি চাল মজুদ করেছেন এমন খবরে গ্রামবাসী বাড়িটি ঘেরাও করে ইউএনও, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশে খবর দেন।

সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশ গিয়ে চালের বস্তাগুলো উদ্ধার করে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করেনি, মামলাও দেয়নি। শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, উদ্ধার করা আট বস্তা চাল খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা থানায় মামলা দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ যেহেতু চাল উদ্ধার করেছে, তারাইতো মামলা করতে পারে।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোস্তাক আহমদ চৌধুরী জানান, ইউএনও’র নির্দেশে ডিলারের স্টক রেজিস্ট্রার ও মাস্টাররোল জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে চালের স্টক সঠিক পাওয়ায় মামলা করার সুযোগ দেখছেন না তারা। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে মামলা হবে।