আশরাফুল ইসলাম দিপু, বয়স মাত্র ২০। এই বয়সেই প্রতারণার মাধ্যমে তিনি বনে গেছেন কোটিপতি।
মার্কিন নাগরিক, জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক কিংবা সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা। প্রয়োজন অনুযায়ী পরিচয় দিয়ে নানা প্রতারণার অভিযোগে ভোলার দক্ষিণ আইচার আশরাফুল ইসলাম দীপুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তার প্রতারণার নানা কৌশল জেনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অবাক।
অষ্টম শ্রেণি পাশ বিশ বছরের দীপু কিশোর বয়স থেকেই সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণদাতাদের সঙ্গে করতেন প্রতারণা। মানবিক টিম নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক গ্রুপ খুলে দেশি-বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে নেয়া সহায়তার টাকাও করেছেন আত্মসাৎ।
রাজধানীর মিরপুরে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে দীপুর প্রতারণার অভিনব সব কায়দা। পুলিশ বলছে, নিজের নামে গেজেট প্রকাশ করে জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন আশরাফ। পেতেছিলেন বদলি বাণিজ্যের ফাঁদ। প্রতারণায় আস্থা অর্জনে মেসেঞ্জারে কোটি টাকার চেক দিয়ে করতেন মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা।
ভাড়া করা নামি-দামি ব্র্যান্ডের গাড়িতে ঘুরে বোড়ানো, অভিজাত হোটেলে বিচরণ সবই ছিলো তার প্রতারণার কৌশল।
ফেইসবুক প্রোফাইলে প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের পরিচিতি প্রকাশেও নিয়েছেন নানা কৌশল। তার কৌশলে নোমান গ্রুপ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি অবাক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে বয়স কম হলেও অপরাধ সংগঠনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে দীপুর। দীপুর বিরুদ্ধে এর আগেও দুটি প্রতারণার মামলা রয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম।
শনিবার দীপুর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তুললে তিন দিনের রি”মা”ন্ড মঞ্জুর করে আদালত।
প্রতারক দিপুর ফাঁদে পড়ে বোকা হয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারাও!
দিপুর প্রতারণার ফাঁদ এমন ছিল যাতে পড়েছেন খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও। সাধারণ একজন নাগরিক হয়েও, কি করে সরকারি দফতরকে ঘোল খাওয়ান? রাষ্ট্রীয় সব উচ্চ পর্যায়ের দফতরের নামে ভুয়া প্রজ্ঞাপন বানিয়ে বাগিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
যদিও শেষপর্যন্ত হাতে হাতকড়া উঠেছে। তবে সরকারি দফতরকে বোকা বানানোর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্তের পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।
পুলিশের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো দেখে মনে হতেই পারে তিনি প্রশাসনের কোনও বড় কর্তা। ভোলা, কিশোরগঞ্জ, সিলেটে সরকারি প্রটোকলে এভাবেই সফর করেছেন বিশ বছর বয়সী কোটিপতি ভুয়া কর্মকর্তা দিপু। এমনকি সৌদি সরকারের ডাকে হজও করেছেন।
একই অঙ্গে যার এতো রুপ, কোথায় তার ক্ষমতার উৎস? এই প্রশ্নের উত্তর মেলে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নামে ভুয়া এই প্রজ্ঞাপনে। যেখানে তিনি মেজর জেনারেল পদমর্যাদার নিরাপত্তা গোয়েন্দা। আর পদায়ন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
এভাবেই সরকারি সফরের নির্দেশনা পাঠিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘোল খাওয়াতেন খোদ সরকারি লোকজনকে। কেউ-কেউ আবার তার মাধ্যমে নিয়োগ চান প্রশাসনে। তখন ভুয়া প্রজ্ঞাপন বানিয়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
কেবল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই নয়, পুলিশ সদরদফতর এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নামেও নকল প্রজ্ঞাপন বানিয়ে চালান বাণিজ্য। করোনা ঠেকাতে লোক দেখানো অর্থসহায়তা দিয়েও বাগিয়ে নেন এমন কোটি-কোটি টাকার চেক।
অবশেষে রাজধানীর পল্লবী থেকে অভিনব এই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু প্রশ্ন হল, জেলা-উপজেলা প্রশাসন দেখভালের দায়িত্ব যাদের কাঁধে, তাদের বোকা বানানো কি এতোটাই সহজ? দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন এমন এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।