আমানতের টাকা ফিরিয়ে দিতে নাজমার খোঁজে ২৭ বছর !

2010

লাইলী বেগম ও নাজমা বেগম। ১৯৯৩ সালে মোহাম্মদপুরের আদাবরে পাশাপাশি বাসার ভাড়াটিয়া ছিলেন দুইজনই। বরিশালের নাজমা সুসম্পর্কের কারণে প্রতিবেশী বাসিন্দা লাইলীর কাছে কিছু টাকা আমানত রাখেন।

কিন্তু কালের পরিক্রমায় বদল হয় তাদের বাসা। এরপর থেকেই নাজমাকে আমানতের টাকা ফেরত দিতে হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করেন লাইলী। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে ‍দুই বছর আগে গোপালগঞ্জের টঙ্গীপাড়ার লাইলীর মৃ’ত্যু হয়। অবশেষে সেই দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তার সন্তাদের কাছে।

নাজমা বেগমের জেলার নাম ও একটি ছবি ছাড়া লাইলী বেগমের কাছে আর কোনো তথ্য ছিল না। ২০১৮ সালে লাইলী আমানতের টাকা ও ছবি সন্তানদের কাছে দিয়ে যান। মৃ’ত্যু’র আগে নাজমাকে খুঁজে বের করে টাকাটা ফেরত দেয়ার জন্য সন্তানদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন তিনি। তাই সময় পেলেই নাজমার ছবি নিয়ে বরিশাল, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন লাইলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী।

মোহাম্মদ আলী বলেন, টাকার পরিমাণ খুব বেশি না হলেও এটা তো আমাদের না। মৃ’ত্যু’র আগেও মা বারবার আফসোস করে বলতেন নাজমার খোঁজ পেলে টাকাটা দিতে পারতাম।

আমরা শুধু জানি, নাজমা বেগমের বাড়ি বরিশাল আর তার একটা ছবি আমাদের কাছে আছে। ঘুরে ঘুরে চেষ্টা করতেছি যদি তার খোঁজ পাই। টাকার পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী বলেন, নাজমা বেগম মায়ের কাছে সাড়ে ছয় হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন।

জানা যায়, ১৯৯১-৯২ সালে ঢাকার আদাবর বাজারের কাছে মোক্তার মিয়ার বাড়িতে স্বামী ও ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন বরিশালের নাজমা বেগম। আর আদাবরের ১ নম্বর রোডের ২৯৪ বাড়িতে স্বামী মো. নওশের আলীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন লাইলী বেগম। নাজমা গৃহপরিচারিকা হিসেবে ঝিগতলার এক বাসায় কাজ করতেন।

সুসম্পর্ক ও বিশ্বস্তার জন্য ১৯৯৩ সালের দিকে নাজমা বেগম উপার্জিত টাকা লাইলী বেগমের কাছে জমা রাখতেন। তখন নাজমার বয়স ছিল ২০ বছর। এখন তার বয়স প্রায় ৫০ এর কাছাকাছি হবে। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মেয়েসহ প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় নাজমার। পরে লাইলীর সহযোগিতায় আনিসুর রহমান খান নামের একজনের সঙ্গে নাজমার বিয়ে হয়।

পাশাপাশি অনেক দিন থাকলেও হঠাৎ করেই লাইলী বেগম নিজ বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় ফিরেন। এতে নাজমার সঙ্গে আর দেখা হয়নি। পরে তার কাছে আমানত রাখা টাকা ফেরত দিতে গিয়ে ওই ঠিকানায় নাজমাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাসা পরিবর্তন করায় নাজমার নতুন ঠিকানাও আশপাশের কেউ দিতে পারেনি। তখন থেকেই লাইলী বেগম ও তার পরিবার নাজমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা না জানায় কোনো খোঁজ মেলেনি তার।

লাইলী বেগমের ছেলে মোহাম্মদ আলী পুরোনো স্মৃতি হিসেবে মায়ের অ্যালবাম বের করেন। সেই অ্যালবামে নাজমা, তার ছোট্ট মেয়ে ও মাসহ একটি গ্রুপ ছবি নিয়ে সময় পেলেই ছুটে যান বরিশালের বিভিন্ন এলাকায়।

মোহাম্মদ আলী বলেন, টঙ্গীপাড়ার পাটগাতি বাস স্ট্যান্ডে রাজধানী, সেবা ও গ্রিন লাইন পরিবহনের কাউন্টারে চাকরি করি আমি। সময় পেলেই নাজমা বেগমের খুঁজে বরিশালের এদিক-ওদিক যাই। কিন্তু এখনো সন্ধান পাইনি তার। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কথা শুনে বরিশালের এক কলেজ শিক্ষক ফেসবুকে এই খবরটা দিয়েছেন। দুইমাস আগে ভোলাও গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। 

নাজমা বেগমের সন্ধান পেলে এই (০১৭১৬৯৯০৮৬২) নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছেন আমানতদারের ছেলে মোহাম্মদ আলী।