আল্লাহ তাঁর পছন্দের বান্দাদের- আমরা জানি আমরা যখন আল্লাহ কাছে কান্নাকাটি করে কিছু চাই সেটা আল্লাহপাক পছন্দ করেন। কিন্তু একই সমস্যার কথা আল্লাহর কাছে অনেক দিন বলার পরেও কেন তিনি বান্দার দোআ কবুল করেন না।
আল্লাহ কি যাদেরকে ভালোবাসেন তাদের বেশি পরীক্ষার মাঝে ফেলন? আল্লাহ যাদেরকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন তাদেরকে তিনি বেশি বেশি পরীক্ষা করেন। আমরা যদি সকল নবীদের জীবনের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো তারাই ছিলেন আল্লাহর সব থেকে পছন্দের এবং তারাই সব সময় কষ্টের মাঝে (পরীক্ষার) ছিলেন।
এমনকি তাদের জীবন ছিল সব থেকে বেশি কঠিন। প্রত্যেকটা মানুষের উচিত পরীক্ষার সময় আল্লাহর অবাধ্য কিছু না করা। আল্লাহর আদেশগুলো ভালো করে পালন করা। ধৈর্য ধারণ করা। তাহলে আল্লাহপাক অবশ্যই কষ্টগুলোকে দূর করে দেবেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করব।
এ অবস্থায় যারা সবর করে। এবং যখনই কোনো বিপদ আসে বলে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে। তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও। তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তার রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরনের লোকরাই হয় সত্যানুসারী। (বাকারা:১৫৫-১৫৭)
মহান আল্লাহপাক আসলে এই দুনিয়ার জীবনে একজন মানুষকে জান্নাতের উপযোগী করে তোলেন। তাই তিনি মানুষকে কিছু পরীক্ষা দেন। এবং যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় আল্লাহপাক তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন। তাই মানুষের উচিত বিপদে পড়লে আল্লাহপাকের সাহায্য চাওয়া। এবং তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। আল্লাহপাক মানুষকে তাদের ঈমানের স্তর অনুযায়ী করে পরীক্ষা করেন।
একজন নবী বা একজন সাহাবী যে পরীক্ষা দিয়েছেন একজন সাধারণ মানুষের পরীক্ষা তেমন নয়। একজন নবীর স্তরও যেমন উপরে তাই তার পরীক্ষার বিষয়টিও অনেক কঠিন। যা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেছেন, কিন্তু মানুষের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তার রব যখন তাকে পরীক্ষায় ফেলেন এবং তাকে সম্মান ও নিয়ামত দান করেন তখন সে বলে, আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন।
আবার যখন তিনি তাকে পরীক্ষায় ফেলেন এবং তার রিযিক তার জন্য সংকীর্ণ করে দেন তখন সে বলে, আমার রব আমাকে হেয় করেছেন। কখনোই নয়, বরং তোমরা এতিমের সাথে সম্মানজনক ব্যবহার কর না। (আল ফজর : ১৫-১৭)
এই আয়াতে আসলে মানুষের বস্তুবাদী জীবন দর্শনকেই তুলে ধরা হয়েছে। এই দুনিয়ার ধন, সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্বকেই সে সবকিছু মন করে। এগুলো পেলে সে আনন্দে উল্লাসিত হয় এবং বলে আল্লাহ আমাকে মর্যাদ দান করেছেন। আবার না পেলে বলে, আল্লাহ আমাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন। অর্থাৎ ধন সম্পদ ও ক্ষমতা কর্তৃত্ব পাওয়া না পাওয়াই হচ্ছে তার কাছে মর্যাদা ও লাঞ্ছনার মানদ- বানিয়ে নিয়েছে। অথচ প্রকৃত ব্যাপারটিই সে বোঝে না।
আল্লাহ দুনিয়ায় যাকেই যা কিছুই দিয়েছেন পরীক্ষার জন্যই দিয়েছেন। ধন ও শক্তি দিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। এগুলো পেয়ে মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না অকৃতজ্ঞ হয়, তা তিনি দেখতে চান। দারিদ্র ও অভাব দিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। ধৈর্য ও পরিতুষ্টি সহকারে মানুষ আল্লাহর ইচ্ছার ওপর সন্তুষ্ট থাকে এবং বৈধ সীমার মধ্যে অবস্থান করে নিজের সমস্যা ও সংকটের মোকবিলা করে, না সততা বিশ্বস্ততা ও নৈতিকতার সব বাঁধন ছিন্ন করে আল্লাহকেই গালমন্দ দিতে থাকে, তা আল্লাহ অবশ্যই দেখতে চান।
সঙ্কটে পরার থেকে বিত্তবান হওয়া হচ্ছে বড় পরীক্ষা। আমরা আসলে মনে করি বিত্তবান হওয়া হচ্ছে আল্লাপাকের নিয়ামত। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপা ইরশাদ করেছেন, তারপর যখন তারা তাদের যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তা ভুলে গেলো তখন তাদের জন্য সমৃদ্ধির সকল দরজা খুলে দিলাম।
শেষ পর্যন্ত তারা যখন তাদেরকে যা কিছু দান করা হয়েছিল তার মধ্যে নিমগ্ন হয়ে গেল তখন অকস্মাত তাদেরকে পাকড়াও করলাম এবং তখন অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, তারা সব রকমের কল্যাণ থেকে নিরাশ হয়ে পড়েছিল। এ ভাবে যারা জুলুম করেছিল তাদের শিকড় কেটে দেয়া হলো। আর সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব প্রভু আল্লাহর জন্য (কারণ তিনিই তাদের শিকড় কেটে দিয়েছেন)। (আন আম : ৪৪-৪৫)
আসলে মুমিনের জীবনের সব কিছুই বিস্ময়কর। সুতরাং মুমিন বান্দার কাছে যেই বিষয়টি ভালো লাগবে তার জন্য সে আল্লাহপাকের কাছে কৃজ্ঞতা প্রকাশ করবে আর যা কিছু তার পছন্দ হবে না অর্থাৎ তার মনে হবে এটা পরীক্ষা জন্য সেটার জন্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহপাক সবাইকে তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে কি গুনাহ হবে?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনের জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানটি জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ২২৫৬তম পর্বে দাঁড়িয়ে পানি পান করলে গুনাহ হবে কি না, সে বিষয়ে চিঠির মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন একজন দর্শক।
প্রশ্ন: দাঁড়িয়ে পানি পান করলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর: দাঁড়িয়ে পানি পান করার বিষয়টি রাসুল (সা.) একাধিকবার নিষেধ করেছেন। সুতরাং, উত্তম হচ্ছে বসে পানি পান করা, দাঁড়িয়ে পান না করা।
তবে সাহাবা কেরাম হাঁটাচলা অবস্থায় পানি পান করতেন এবং খেতেন। যদি কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে দাঁড়িয়ে পান করতে পারবেন। কিন্তু অপ্রয়োজনে বসে পান করবেন, দাঁড়িয়ে পান করবেন না।
পানি পান করার সুন্নাহ এবং আদব হলো, বসে পান করা। কিন্তু দাঁড়িয়ে পান করলে এই কাজটি কি হারাম হবে, তিনি কি গুনাগার হবেন? এটা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। শেখ নাসির উদ্দিন আলবানী (রা.) তাঁর গবেষণার মধ্যে রাসুল (সা.)-এর নিষেধাজ্ঞাকে কঠিনভাবে উল্লেখ করেছেন।
আল তাহকিক মাহকিক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, সাহাবারা দাঁড়িয়ে পান করেছেন, এমনকি রাসুল (সা.) জমজমে দাঁড়িয়ে পানি পান করেছেন, তা সাব্যস্ত হয়েছে। এখান থেকে বোঝা যায়, যদি কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, শুধু তাহলে দাঁড়িয়ে পান করা জায়েজ।