কাবা শরিফের দোয়া কবুলের স্থানগুলো- কাবা শরিফ মহান আল্লাহর ঘর। এ ঘরের জেয়ারত ও ইবাদত সব কিছুই পূণ্যের কাজ। আল্লাহ তাআলা শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ ফরজ করেছেন।
আর হজের সময় ছাড়াও বছর জুড়েই মুসলিম উম্মাহ ওমরাহ পালনে জড়ো হন এ পবিত্র নগরীতে। এখানে বেশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, যেখানের দোয়া সব সময় আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেন। যা ছবিসহ তুলে ধরা হলো-
১. মাকামে ইবরাহিম- হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পদচিহ্নের স্মৃতিস্তম্ভ। কাবা শরিফের পূর্ব পাশে তাওয়াফের স্থানেই তা অবস্থিত।
পদচিহ্ন পাথরটি সোনালি রঙের কারুকার্য খচিত লৌহ নির্মিত বেড়া দিয়ে মোড়ানো।তাওয়াফ সম্পন্ন করার পর এখানে দুই রাকাআত নামাজ পড়া সুন্নাত। এ স্থানে নামাজ পড়ার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানোর স্থানকে নামাজের স্থান বানাও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৫)
সুতরাং এখানে নামাজ পড়ে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা সব সময় এ স্থানের দোয়া কবুল করে নেন।
২. মিজাবে রহমত- এটি কাবা শরিফের উত্তর পাশ্বে হাতিকে কাবার ওপরে অবস্থিত। এ স্থান দিয়েই পবিত্র কাবা শরিফে ছাদের পানি নিচে পড়ে। এ স্থানের নিচে নামাজ পড়ে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার সে দোয়া সব সময় কবুল করে নেন।
৩. কাবার অভ্যন্তর- কাবা ঘরের ভেতরে প্রবেশ সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য পবিত্র কাবা ঘরের দরজা খোলা হয়। কাবা ঘরের ভেতরের দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা সব সময় তা কবুল করে নেন।
৪. হাজরে আসওয়াদ- বেহেশতি পাথর হাজরে আসওয়াদ। হাদিসের তথ্য মতে এ পাথরটি ছিল দুধ কিংবা বরফের চেয়ে সাদা। মানুষের পাপ গ্রহণে এটি এখন কলোতে পরিণত হয়েছে। আর একে বলা হয় হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর। এ পাথরকে স্পর্শ সম্ভব হলে চুম্বন অথবা দুই হাত তুলে এর দিকে ইশারা করেই তাওয়াফ শুরু করতে হয়।
হাজরে আসওয়াদের স্পর্শে মানুষের গোনাহ ঝরে যায়। আর এ স্থানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
৫. মুলতাজেম- মুলতাজেম কাবা শরিফের দেয়ালের ছোট্ট একটি অংশের নাম। যা হাজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মাঝখানে অবস্থিত। এটি দোয়া কবুলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
এ স্থানে বুক, মুখমন্ডল ও হাত দিয়ে ধরে অবস্থান করে দোয়া করা। মুসলিম উম্মাহ এ স্থানে একান্তে আবেগে রোনাজারি করে থাকে। এ স্থান ধরে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা সব সময় এ স্থানের দোয়া কবুল করে নেন।
৬. হাতিমে কাবা বা হিজরে ইসমাইল- কাবা শরিফ সংলগ্ন উত্তর পাশে অবস্থিত তথা কাঁধ সমান উঁচু অর্ধ চাঁদের ন্যায় গোলাকার স্থানকে হাতিমে কাবা বা হিজরে ইসমাইল বলা হয়।
তাওয়াফ কারিরা ৯০ সেন্টিমিটার উচ্চতা ও ১.৫ মিটার পুরো দেয়াল বেষ্টিত স্থানসহ (হাতিমে কাবা বা হিজরে ইসমাইল) তাওয়াফ করে থাকে।
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম হাতিমে কাবাসহ বর্তমান কাবার সঙ্গে পূর্ণ কাবা নির্মাণ করেন। কুরাইশরা কাবা ঘর সংস্কারের সময় পুরো কাবা অর্থের অভাবে তৈরি করতে পারেনি। পরে বর্তমান কাবাকে বর্গাকৃতির করে হাতিমকে কাঠ দিয়ে আবৃত করে রাখে।
এটিও কাবার মূল অংশ। এখানে নামাজ পড়া এবং দোয়া করা, কাবা ঘরের দোয়া করার সমান। আর এ কারণেই তাওয়াফের সময় হাতিমে কাবাকেও তাওয়াফ করতে হয়। এ স্থানের দোয়া আল্লাহ সব সময় কবুল করে নেন।
৭. মাতআফ বা তাওয়াফের স্থান- এক কথায় কাবা শরিফের চারদিকে চত্তর। যে স্থানের ওপর দিয়ে হজ ও ওমরা পালনকারীরা তাওয়াফ করে থাকেন। আর আল্লাহ তাআলা এসব তাওয়াফকারীদের ওপর প্রতিদিন ৬০টি করে রহমত বর্ষণ করেন। তাওয়াফ করার সময় মাতআফে চক্কর দিতে দিতে যে দোয়া করা হয়, আল্লাহ তাআলা সব সময় মাতাআফের তথা তাওয়াফের স্থানের দোয়া কবুল করে নেন।
৮. সাফা ও মারওয়া পাহাড়- বিবি হাজেরার স্মৃতি বিজড়িত আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়া। এটি কাব ঘর শরিফ থেকে ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত।
সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের দূরত্ব ৩০০ মিটার বা ৯৮০ ফুট। এ স্থানে সাত বার আসা-যাওয়া হজ ও ওমরার অন্যতম রোকন। এ পাহাড় দুটিতে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা সব সময় বান্দার দোয়া কবুল করে নেন।
হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য এ স্থানগুলোতে দোয়া করা জরুরি। এ স্থানগুলো দোয়া মহান আল্লাহ তাআলা সব সময় কবুল করে নেন। মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ স্থানে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।