পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নালরাগু প্রদেশের ইয়াবালা গ্রামের ৪৭৩ জন বাসিন্দা এক সঙ্গে পবিত্র ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আফ্রিকার ‘রেসালাতে তাওসিয়া’ ইন্সটিটিউটের সদস্যদের দাওয়াত ও তাবলিগের ফলে ইয়াবালা গ্রামের এ লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করেন।
ঘানার এ ইয়াবালা গ্রামের মোট বাসিন্দার সংখ্যা ১২০০। এদের মধ্যে আগে ৩২০ জন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আর এ দফায় ইসলাম গ্রহণ করলেন ৪৭৩ জন। সে হিসেবে ৭৯৩ জন ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
আফ্রিকার দেশগুলোতে ‘রেসালাতে তাওসিয়া’ ইন্সটিটিউট ইসলামের প্রচার-প্রসারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাদের দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতেই ইসলামের সুমহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছেন।
দাওয়াত ও তাবলিগের ধারক সংগঠন ‘রেসালাতে তাওসিয়া’ ইন্সটিটিউট। এ ইন্সটিটিউটে ইসলামের প্রচার-প্রসারে নিয়মিত ধর্মীয় শিক্ষার ক্লাসের আয়োজন করে চলেছেন সংগঠনটি।
দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ ছাড়াও সংগঠনটি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সমাজ-সংস্কারমূলক কাজও করে থাকে। বিভিন্ন দেশে মসজিদ নির্মাণ, কূপ খনন করা ছাড়াও মুসলমানদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে সংগঠনটি।
নও মুসলিম অধ্যুষিত ইয়াবালা গ্রামের এখনো কোনো মসজিদ নির্মাণ হয়নি। নেই কোনো পুরনো মসজিদও। নও মুসলিমদের উদ্যোগেই মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মসজিদ নির্মাণে মুসলমানরা আর্থিকভাবে সহায়তাও করেছেন।
৯১ বছরে যে মসজিদে এক মিনিটের জন্যও থামেনি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত
কোরআন তেলাওয়াত চলছে টাঙ্গাইলের একটি মসজিদে- টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী নওয়াব শাহী জামে মসজিদে গত ৯১ বছরের মধ্যে এক মিনিটের জন্যও থামেনি কোরআন তেলাওয়াত। দীর্ঘ ৯১ বছর যাবৎ সার্বক্ষনিকভাবে কোরআন তেলাওয়াত করা হচ্ছে এই মসজিদে। যা ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।
প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বহু মানুষ আসেন এ মসজিদটি দেখতে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে ও নামাজ পড়তে। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর এ মসজিদে ১৯২৭ সাল থেকে একটানা ২৪ ঘণ্টা কোরআন তেলাওয়াত চলছে নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে।
এক মিনিটের জন্যও বন্ধ হয়নি তেলাওয়াত। কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত সাতজন কারি প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর এই মসজিদে ধারাবাহিকভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকেন।
ধনবাড়ীর বিস্ময় জাগানিয়া এ মসজিদের নাম নওয়াব শাহী জামে মসজিদ। ৭০০ বছরের পুরোনো এ মসজিদটি ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এ অঞ্চলে।
জানা যায়, সেলজুক তুর্কি বংশের ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ নামে দুই ভাই ১৬ শতাব্দীতে ঐতিহ্যবাহী এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। জনশ্রুতিতে রয়েছে, সম্রাট আকবরের সময় এই দুই ভাই ধনবাড়ীর অ ত্যা চা রী জমিদারকে পরাজিত করার পর এ অঞ্চলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী প্রায় ১১৫ বছর আগে এ মসজিদটি সম্প্রসারণ করে আধুনিক রূপ দেন। তিনি বাংলাভাষার প্রথম প্রস্তাবক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যুক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
নওয়াব শাহী জামে মসজিদ সংস্কারের আগে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৩.৭২ মিটার (৪৫ ফুট)। প্রস্থ ছিল ৪.৫৭ মিটার (১৫ ফুট)। সংস্কার করে মসজিদটি বর্গাকৃতির ও তিনগম্বুজ বিশিষ্ট মুঘল স্থাপত্যের বৈসাদৃশ্যপূর্ণ করা হয়েছে। মোগল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি এই মসজিদের মোজাইক গুলো এবং মেঝের মার্বেল পাথরগুলো নিপুণভাবে কারুকার্যমণ্ডিত। সংস্কারের কারণে প্রাচীনত্ব কিছুটা বিলীন হলেও মসজিদের সৌন্দর্য শোভা অনেক বেড়েছে।
মসজিদের ভেতরে ঢোকার জন্য পূর্বদিকের বহু খাঁজে চিত্রিত খিলান যুক্ত তিনটি প্রবেশ পথ, উত্তর ও দক্ষিণে আরো একটি করে সর্ব মোট পাঁচটি প্রবেশ পথ রয়েছে।
প্রায় ১০ কাঠা জায়গায় নির্মিত মসজিদটির চর্তুদিক থেকে ৪টি প্রবেশ পথ এবং ৯টি জানালা এবং ৩৪টি ছোট ও বড় গম্বুজ রয়েছে। বড় ১০টি মিনারের প্রত্যেকটির উচ্চতা ছাদ থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু।
মসজিদের দোতলার মিনারটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। ৫ ফুট উচ্চতা এবং ৩ ফুট প্রস্থের মিহরাবটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন।
মসজিদের মেঝে ও দেয়াল কাঁচের টুকরো দিয়ে নকশা ও মোজাইক করা। ভেতরের পুরো অংশ জুড়ে চীনা মাটির টুকরো দিয়ে অধিকাংশ স্থানে ফুলের নকশা করা হয়েছে।
নওয়াব শাহী জামে মসজিদ ৩০ ফুট উচ্চতার মিনারের মাথায় স্থাপিত ১০টি তামার চাঁদ মিনারের সৌন্দর্য দ্বিগুণ করেছে। মসজিদে ১৮টি হাড়ি বাতি সংরক্ষিত রয়েছে, যে গুলো শুরুর যুগে নারিকেল তেলের মাধ্যমে আলো জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হতো।
মুঘল আমলে ব্যবহৃত ৩টি ঝাড় বাতিও রয়েছে। সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদে একসঙ্গে ২০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
নওয়াব শাহী জামে মসজিদের পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট ও কবরস্থান। যেখানে দা ফ ন করা হয়েছে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীকে। তার ওয়াকফকৃত সম্পদের মাধ্যমে মসজিদ, পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসা ও ঈদগাহ পরিচালিত হয়।
পূর্বদিকের ৩টি প্রবেশ পথ বরাবর পশ্চিমের দেয়ালে ৩টি মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটির অষ্টভুজাকারের, দুই পাশে রয়েছে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলান। তাছাড়াও সেটিতে ফুলের রকমারি নকশা রয়েছে। অন্য দু’টি মিহরাবও বহু খাঁজবিশিষ্ট তবে কারুকার্যহীন খিলানযোগে গঠিত।
প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর শান বাঁধানো ঘাটের বিশাল একটি দীঘি রয়েছে। তাতে মুসল্লিরা অজু করেন। তাছাড়াও মসজিদের আশপাশে সুপ্রশস্ত ও খোলামেলা অনেক জায়গা রয়েছে। যা দর্শনার্থীদের মনে বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টি করে।
নওয়াব শাহী জামে মসজিদে যে ভাবে যাবেন- মহাখালীর টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে ধনবাড়ী। ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে হেঁটে বা রিকশায় করে নবাববাড়ী মসজিদ।