ঘুমানোর আগে ও ঘুম থেকে উঠে যে দোয়া পড়তেন বিশ্বনবি (সা.)

1264

হজরত হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় নিজ বিছানায় শোয়ার (ঘুমানোর আগে) সময় নিজ হাত গালের নিচে রাখতেন।

অতঃপর বলতেন-
‏ اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا

উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনারই নামে মরে যাই আবার আপনারই নামে জীবন লাভ করি।’

আর যখন (ঘুম থেকে) সজাগ হতেন, তখন বলতেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

উচ্চারণ- ‘আলহামদু লিল্লাহিল লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’

অর্থ : ‘সব প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করেছেন এবং তার দিকেই আমাদের পুনরুত্থান।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির ঘুমানোর এ ছোট্ট আমলটি নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

যেভাবে দোয়া করতে শিখিয়েছেন বিশ্বনবি….

দোয়া হলো প্রার্থনা করা। হাদিসে এসেছে, দোয়াই হলো ইবাদত। তাই দোয়া করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার নিকট। অন্য কারো কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করা যাবে না। বিশেষ করে আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো- রাত জেগে তাঁর হামদ, ছানা ও তাসবিহ পাঠ করার পর প্রত্যেকের মনের একান্ত প্রয়োজনীয় চাওয়া-পাওয়ার আবেদন করা।

যখন কোনো মানুষ লজ্জিত হয়ে অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে খালি হাতে ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন। আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে সাহায্য লাভে দোয়া করতে হবে গভীর রজনীতে। যখন সমগ্র দুনিয়া নিরব নিস্তব্দ হয়ে যায়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা রাতের দ্বিপ্রহরের পর প্রথম আকাশে এসে বান্দাকে ডাকতে থাকেন; তাদের প্রয়োজন পূরণে তাঁর নিকট প্রার্থনা করতে ডাকতে থাকনে।

গভীর রজনীতে যারা কিছু সময় রাত জেগে আল্লাহ তাআলার হামদ, ছানা ও তাসবিহ পড়ে দোয়া করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া কবুল করেন। হাদিসে বিশ্বনবি তাঁর উম্মতের জন্য হামদ, ছানা ও তাসবিহ পাঠের পর দোয়ার বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন। যা উল্লেখ করা হলো-

হজরত উবাইদাহ ইবনে সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি রাত জেগে পাঠ করে-

উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন ক্বাদির; আল হামদু লিল্লাহি, ওয়া সুবহানাল্লাহি, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার; ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।’

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তারই, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই, তিনিই সবকিছুর উপর শক্তিমান; সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, আল্লাহ পবিত্র, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান; কোনো ভরসা নেই, কোনো শক্তি নেই (গুনাহ থেকে বাঁচার এবং নেক কাজ করার) আল্লাহর তাআলার তাওফিক ছাড়া।’

অতঃপর (এ দোয়া) বলে- اَللهُمَّ اغْفِرْلِيْ (আল্লাহুম্মাগফিরলি) ‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।’ অথবা অন্য কোনো দোয়া করে; ওই ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হয়।

অতঃপর অজু করে এবং নামাজ পড়ে; তার (ওই বান্দার) নামাজ কবুল করা হয়। (বুখারি, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

বিশ্বনিবর উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, গভীর রাতে আল্লাহর প্রশংসা পূর্বক তাঁর নিকট দোয়া করলে, অজুর পর নামাজ আদায় করলে, আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির দোয়া এবং নামাজ কবুল করেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিখানো পদ্ধতিতে হামদ, ছানা, তাসবিহ, অজু, নামাজ এবং দোয়া যথাযথভাবে সম্পাদনের তাওফিক দান করুন। আমিন।