চিত্রনায়ক ফারুকের ব্যাংকঋণ ৫ হাজার কোটি টাকা নয়, আসলে কত?

3682

কয়েক বছর ধরে চিত্রনায়ক ফারুকের ব্যাংকঋণ নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ রয়েছে তাঁর।

বরেণ্য এ অভিনেতার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে তিনি ঋণখেলাপি এটা সত্য। তাহলে তাঁর ঋণের পরিমাণ কত?

ফারুকের স্ত্রী ফারহানা পাঠানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ হয়। তিনি প্রথম আলোকে ব্যাংকঋণ থাকার কথাটি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘২৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল।

এরপর দুই কোটি টাকা পরিশোধও করা হয়। তবে বিষয়টা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে বিস্তারিত তথ্য সবাইকে জানাতে পারব।’

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রয়াত এ অভিনেতার নামে সুদসহ প্রায় ১০১ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ রয়েছে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক থেকে ২০০৯ সালে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন আকবর হোসেন পাঠান। গাজীপুরে ১১৫ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলেন ফারুক ডাইং নিটিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং।

২০১৩ সালে আবারও এই প্রকল্পে ঋণ দেয় সোনালী ব্যাংক। তবে এর কিছুদিন পর ঋণ হিসাবটি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় কারখানা।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ৮২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে সোনালী ব্যাংক।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান আকবর হোসেন পাঠান। ওই সময় বিশেষ বিবেচনায় ঋণটি পুনঃ তফসিল করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক এতে বিশেষ অনুমতি দেয়। তবে কারখানা চালু হয়নি, এরপর ঋণও শোধ করেননি ফারুক। পরে ব্যাংক আবারও অর্থঋণ আদালতে জারি মামলা দায়ের করে। তখন ব্যাংকঋণ সুদসহ বেড়ে দাঁড়ায় ১০১ কোটি টাকা। ব্যাংকের কাছে বন্ধকী হিসেবে রয়েছে শুধু গাজীপুরের কারখানা।

ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই ঋণ ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকে ফারুকের কোনো দেনা থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি।

ব্যাংকের নথিপত্র থেকে দেখা গেছে, ফারুক ডাইং নিটিং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ৮৮ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার আকবর হোসেন পাঠান ও ১২ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার তাঁর স্ত্রী ফারহানা পাঠান।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মর্টগেজ সম্পত্তি ভোগ, দখল ও বুঝিয়ে নেওয়ার রায় পেয়েছে ব্যাংক। শিগগিরই কারখানায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।

এরপর বিক্রি করে পাওনা টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ব্যতিক্রম কিছু না হলে নিয়ম অনুযায়ী টাকা আদায়ের এটাই একমাত্র উপায়। তবে ফারুকের ব্যাংকঋণের বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত সোমবার সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যু হয়। ফারুকের মরদেহ বহন করা উড়োজাহাজটি মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

সকাল সোয়া আটটায় বিমানবন্দরের ৮ নম্বর ফটক দিয়ে ফারুকের মরদেহ বের করা হয়। বিমানবন্দর থেকে ফারুকের মরদেহ সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর উত্তরায় তাঁর নিজের বাসভবনে।

সেখান থেকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সেখানে রাখা হয় মরদেহ।

এরপর শহীদ মিনার থেকে ফারুককে বহনকারী কফিন তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে নেওয়া হয়। এফডিসিতে ফারুককে শেষবারের মতো বিদায় জানান সহকর্মী শিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজক ও কলাকুশলীরা।

শহীদ মিনার ও এফডিসিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে ফারুককে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়, সেখানে তাঁর জানাজা হয়। এরপর গুলশানে আজাদ মসজিদে তাঁর আরেকবার জানাজা হয়।

স্ত্রী ফারহানা পাঠান এবং দুই সন্তান তুলসী ও শরৎকে নিয়ে নায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক।

মঙ্গলবার রাতে উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম টিওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়।