জানাজায় জুতা খুলে নাকি পরে দাঁড়াতে হবে, ইসলামের সঠিক নিয়ম কী ?

2824

জানাজায় জুতা খুলে নাকি পরে দাঁড়াতে- সমাজে ধর্মীয় কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়ে থাকে। আসলে যার কোনো ভিত্তি নেই অথবা ইসলাম ওই বিষয়গুলো সমর্থনও করে না।

কিন্তু না জানা থাকার কারণে সাধারণ মানুষ বিষয়গুলো নিয়ে ভুল করে থাকে। এ রকম কয়েকটি বিষয়ে আজকের প্রশ্নোত্তর।

প্রশ্ন. জানাজার সময় অনেকে পা থেকে জুতা খুলে রাখেন। আবার অনেকে জুতার উপর দাঁড়ান। আবার অনেকে জুতা পরেই দাঁড়ান।

এ ব্যাপারে ইসলামের সঠিক নিয়ম কি?

উত্তর. জানাজায় দাঁড়ানোর জায়গা বা জুতা পবিত্র হলে তিনটি পদ্ধতির যে কোনোটিই অবলম্বন করা যেতে পারে।

আর যদি দাঁড়ানোর জায়গা পবিত্র কিন্তু জুতার নিচে নাপাক থাকে তাহলে জুতা খুলে মাটিতে দাঁড়াতে হবে, অথবা জুতা খুলে জুতার উপরে দাঁড়াতে হবে।

অবশ্য এ ক্ষেত্রে মাটিতে দাঁড়ানোই উত্তম। আর দাঁড়ানোর জায়গা কিংবা জুতার নিচে নাপাক থাকার আশঙ্কা হলে জুতা খুলে তার উপরে দাঁড়ানোই উত্তম।

(ফাতহুল বারী ১/৫৮৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬২৫) প্রশ্ন. জানাজা নামাজের সময় সাধারণত দেখা যায় যে, সালামের সময় কেউ ডান দিকে সালাম ফেরানোর সময় ডান হাত ছেড়ে দেয় এবং বাম দিকে সালাম ফেরানোর সময় বাম হাত ছেড়ে দেয়।

আবার কেউ উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর দুই হাত এক সাথে ছেড়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি কোনটি? উত্তর. ডানদিকে সালাম ফিরিয়ে ডান হাত এবং বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে বাম হাত ছাড়ার নিয়মটি সঠিক নয়।

এ ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি আছে-

১- জানাজার নামাজে ৪র্থ তাকবিরের পর সালামের পূর্বেও উভয় হাত ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ আছে।

২- আবার সালাম ফেরানোর পরেও হাত ছাড়ার সুযোগ আছে। উভয়টির যে কোনোটির উপর আমল করা যেতে পারে। (আলবাহরুর রায়েক ১/২১৯;বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৭; ফাতওয়ায়ে খানিয়া)

ইসলামে নারীরা পায়ে মেহেদি দিতে পারবে কি?

ইসলামি শরিয়তে মেয়েদের জন্য মেহেদি ব্যবহারের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। অনেকেই মেয়েদের পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা নিয়ে আপত্তি করে থাকেন। এরও কোনো দলিল-প্রমাণ হাদিস ও ফিকাহের কিতাবে পাওয়া যায় না।

ইসলামি শরিয়তে মেয়েদের জন্য মেহেদি ব্যবহারের বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। অনেকেই মেয়েদের পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা নিয়ে আপত্তি করে থাকেন। এরও কোনো দলিল-প্রমাণ হাদিস ও ফিকাহের কিতাবে পাওয়া যায় না।

তবে পুরুষের জন্য মেহেদি ব্যবহার করা জায়েজ নেই। কিন্তু যদি কোনো অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য মেহেদি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, তখন পুরুষের জন্য মেহেদি ব্যবহার করা জায়েজ আছে।

আবু দাউদ শরিফের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক মহিলা হজরত আয়েশা রাজিয়াল্লাহু আনহুর কাছে মেহেদি লাগানো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জবাবে বলেন, এতে কোনো সমস্যা নেই।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে মেহেদি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছেন। সুতরাং মহিলাদের জন্য মেহেদি ব্যবহার করা মোস্তাহাব।

ইমাম নাওয়াওয়ী [রহ] বলেন, “বিবাহিত নারীর দুই হাত ও দুই পা মেহেদী দ্বারা খেযাব করা মুস্তাহাব। কারণ, এ মর্মে অনেক প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে। প্রসিদ্ধ হাদীস দ্বারা তিনি হাদীসের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেছেন, নারীরা পায়ে মেহেদী ব্যবহার করতে পারবে কি না- এ বিষয়ে ইসলামে কোথাও স্পষ্ট উল্লেখ নেই।

মেয়েরা পায়েও মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে। যারা মনে করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেহেদি ব্যবহার করেছেন, তাই সেটি পায়ে ব্যবহার করা বেয়াদবি হবে, তাদের এ ধারণা সঠিক নয়।

অপরদিকে, জনৈকা নারী আয়েশা [রা]-কে মেহেদীর খেজাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি বলেন, এতে সমস্যা নেই, তবে আমি তা পছন্দ করি না। কারণ আমার রাসুল [সা] তা পছন্দ করতেন না।

আয়েশা [রা] থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন- জনৈকা নারী হাতে কিতাব নিয়ে পর্দার আড়াল থেকে রাসুল [সা]-এর দিকে ইশারা করেন, নবী রাসুল [সা] তাঁর নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে বলেন, এটা কি পুরুষের হাত না নারীর হাত? তিনিই বললেন, বরং এটা নারীর হাত।

মহানবী (সা.) বলেন, তুমি নারী হলে অবশ্যই তোমার নখের রং পরিবর্তন করতে- অর্থাৎ মেহেদী দিতে। তবে এমন বস্তু দিয়ে রঙ করবে না, যা জমে যায় ও পবিত্রতা অর্জনে বাঁধা হয়। (আবু দাউদ)

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ মোবারক স্পর্শ করা মেহেদির কোনো অংশও যদি আমরা সংরক্ষিত অবস্থায় পেতাম, তাহলে সেটা পায়ে কেন, মাথায় ব্যবহারের স্পর্ধাও দেখাতাম না।

জাওয়াহিরুল ফিকহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, সাজ-সজ্জার উদ্যেশ্যে পুরুষরা কখনও হাতে-পায়ে মেহেদি লাগাতে পারবে না। কারণ মেহেদি এক ধরনের রঙ। আর পুরুষদের জন্য রঙ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

তবে পুরুষরা মাথার চুল ও দাঁড়িতে মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে।