মানুষ আশায় বাঁচে। জীবনে সব আশা যে সত্যি হয়ে সামনে আসে, এমন কিন্তু নয়। বরং দিনশেষে বেশিরভাগই আশাভঙ্গের বেদনা বুকে নিয়ে ঘরে ফেরে। ‘কিছুই হয়নি’ এমন ভাব নিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে পরবর্তী কাজে নেমে পড়েন অনেকেই। কিন্তু সবাই কি তা পারেন? এমনও অনেকে আছেন যারা আশাভঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও ভেঙে পড়েন। ‘আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না’ এই মনোভাব নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেন।
আশা যখন অতিরিক্ত হয়ে যায় তখন কিছু হতাশাও আসবে। এতে অস্থির হবেন না। একটু শুধু সময়ের অপেক্ষা, হতাশা নিজ থেকেই চলে যাবে। এর ফাঁকে কারণ খুঁজে দেখুন কেন হতাশ হলেন। হতাশা কাটাতে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। হতাশা মুষড়ে না পড়ে নিজেকে ফিরিয়ে আনার উপায় জেনে নিন-
প্রথমেই ভেবে দেখুন, যে বিষয়টি নিয়ে আশা করেছিলেন তা ন্যায্য ছিল নাকি অন্যায্য? অন্যায্য আশা করলে হতাশ হতেই হবে। নিজের ক্ষমতা, পরিস্থিতি সম্বন্ধে ধারণা না থাকলে দুরাশা করে মানু। কাজেই কী ভুল হয়েছে খুঁজুন। ভুল খুঁজে পেলে সতর্ক হয়ে যান। ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।
নাহ। আপনার আশা ন্যায্যই ছিল, তবুও হতাশ হতে হলো? তাহলে কি তাকে বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিল? কী সেই ত্রুটি? কীভাবে তাকে শোধরানো যেতে পারে, সেটা ভাবুন।
আশা ন্যায্য ছিল, চেষ্টাতেও ঘাটতি ছিল না, তাও সফল হননি, এরকমও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিকল্প আর কী হতে পারে সে সম্বন্ধে ধারণা থাকা দরকার। যেমন ধরুন, একটি বিষয় নিয়ে পড়ার ইচ্ছা, চেষ্টা সত্ত্বেও হল না। এবার কী করবেন? আর একবার চেষ্টা করবেন না অন্য বিকল্প খুঁজে নেবেন, তা নিয়েও ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ঘটনাটাকে গুরুত্বহীন করতে পারলে ভোলা সহজ। গুরুত্বহীন করার অন্যতম রাস্তা প্রায়োরিটি লিস্ট বানানো। যার জন্য হতাশ হয়েছেন সেটা হয়তো টপ প্রায়োরিটি ছিল, তার পরও তো কিছু আছে। এ বার না হয় ভাবুন পরের প্রায়োরিটিকে নিয়ে।
মন খারাপ করে বসে না থেকে আড্ডা দিন। সিনেমা দেখুন। ব্যায়াম বা খেলাধুলাও করতে পারেন।
এবার ভেবে দেখুন হতাশ হলেন কেন? কী ক্ষ’তি হয়েছে? টাকা, প্রেম, নিরাপত্তা, ক্ষমতা না অন্য কিছু? ক্ষ’তি’পূরণ কী ভাবে করবেন? বিকল্প রাস্তা খুঁজে না সমঝোতা করে? প্রেমের বদলে নতুন প্রেম না পুরোনোটাই টিকিয়ে রাখা?
সমাজে নিজের অবস্থান বাঁচাতে নতুন চাকরি না নত হয়ে আগেরটা বাঁচানো? আবেগে চলবেন না বুদ্ধিতে? নাকি ইগোর কাছে নতি স্বীকার করবেন- কোন পরিস্থিতিতে কী বেছে নেবেন, কী করবেন হতাশার কারণ অনুধাবন করে ভেবে দেখতে হবে সে সব।
সমস্যা সমাধানে যুক্তি ও আবেগের দোটানায় পড়লে কয়েক জন বাস্তববাদী লোকেদের সঙ্গে আলোচনা করুন। দেখুন এরকম পরিস্থিতিতে তারা কী করতেন। আপনিও সেই পথে চলবেন কি না ভেবে দেখুন।
যারা সব সময়ই হতাশ থাকেন ঠিক সময়ে ঠিকঠাক চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং না হলে এই অসুখ বাড়তে পারে। আসলে এই বিশ্বাসের মূল লুকিয়ে থাকে বেড়ে ওঠার পরিবেশে। ‘হবে না’, ‘করিস না’ জাতীয় কথা শুনতে শুনতে বড় হলে, তার দ্বারা যে কোনো কাজ সম্ভব, সেই বোধই জাগে না। তুলনা করে হেয় করলেও তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়।
এই আত্মবিশ্বাস হারানোর মূলে যে তার বেড়ে ওঠার পরিবেশ খানিকটা দায়ী সেটা বোঝানো গেলে কাজ সহজ হয়। পরের ধাপে ছোটখাটো সাফল্যগুলিকে কা’টাছেঁ’ড়া করে দেখানো হয়। সফল হওয়ার অনেক গুণই যে তাঁর আছে তা বোঝাতে পারলেই অর্ধেক কাজ সারা।
এক কাজে সফল হলে অন্য কাজেও সফল হওয়া সম্ভব। কাজেই এক একটা ব্যর্থতাকে কা’টাছেঁ’ড়া করে যদি দেখানো যায়, আসলে সেভাবে চেষ্টা করা হয়নি বলেই সাফল্য আসেনি- কাজ হতে পারে। নিজে করা সম্ভব না হলে ভালো কাউন্সেলরের তত্ত্বাবধানে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি করাতে পারেন।
এই পর্যায়ে রোগীকে সাহস জোগানোও খুব জরুরি। বোঝানো দরকার যে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে লজ্জার কিছু নেই। অনেক নতুন কিছু শেখা যায় তাতে, যা পরবর্তী সাফল্যের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজে আসে। ব্যর্থতার ভয়ে চেষ্টা ছেড়ে দিলে বরং তা লজ্জাজনক।
তাই কিছু সহজ কাজ দিয়ে, তাকে সাহায্য করে একটা সাফল্য এনে দিলে আত্মবিশ্বাস বাড়তে শুরু করে। এর পর ধাপে ধাপে কঠিন কাজের দিকে এগোতে পারেন মানুষ।