জেনে নিন উকুন নিধন করার সহজ পদ্ধতি…

1455

উকুন এমনই এক পোকা যার বসবাস আমাদের চুলে! ভেবে দেখুন তো, আপনারই মাথায় ঘর-সংসার পেতে বসেছে একদল পোকা! ভাবতেই কেমন গা ঘিনঘিন লাগছে না? এই পোকাটি শুধু অস্বস্তিদায়কই নয়, বিভিন্ন অসুখেরও কারণ হতে পারে।

তাই শুরুতেই উকুনকে প্রতিরোধ না করলে তা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার উকুন মা রার জন্য ক্ষতিকারক কেমিক‍্যাল ব্যাবহার করলে তা চুলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কিছু সহজ উপায় জেনে নিন উকুন দূর করার-

নারিকেল তেল: উকুন তাড়ানোর জন্য কিন্তু নারিকেল তেলের কোনো জুড়ি নেই। নারিকেল তেল উকুনের শ্বাস’রো’ধ করতে সাহায্য করে। রাতে ৩-৪ চামচ নারিকেল তেল এবং কর্পূর গরম করে তা চুলে এবং মাথার তালুতে ভালো করে লাগাতে হবে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে শ্যাম্পু করতে হবে। মোটামুটি সপ্তাহে ৫ দিন নিয়ম করে এই পদ্ধতি অনুসরণ করার পর উকুনমুক্ত হতে পারবেন।

লেবুর রস: লেবুর রসে আ্যাসিড থাকে যা উকুন তাড়াতে এবং আটকাতে উপযোগী। লেবুর রসের সাথে আদা বেটে সেই মিশ্রণটি চুলে প্রায় আধ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর পানি এবং শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি পর পর ৪-৫ দিন চুলে লাগালে পুরোপুরি উকুন তাড়ানো যায়।

ভিনেগার: উকুনকে প্রতিরোধ করার জন্য ভিনেগার হলো এক মোক্ষম উপায়। ভিনেগারে প্রচুর আসিটিক আ্যাসিড থাকে যা আমাদের চুলে হওয়া উকুনকে মা র তে সাহায্য করে। ভিনিগার উকুনের ডিম বা নিটকে আমাদের চুলের থেকে বিলীন করে দেয়। সমান পরিমাণ ভিনেগার আর মিনারেল অয়েল মিশিয়ে ঘুমোনোর আগে তা আমাদের মাথার তালুতে এবং চুলে লাগিয়ে রাখতে হবে। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্যাম্পু করতে হবে। মোটামুটি সপ্তাহে ২-৩ বার এই মিশ্রণটি লাগালে কিছু সপ্তাহের মধ্যেই উকুন থেকে বাঁচা সম্ভব।

পেঁয়াজ: পেঁয়াজ একটি খুবই সহজ এবং ঘরোয়া উপায়ে যা দিয়ে উকুন তাড়ানো যায়। কিছুটা পরিমানে পেঁয়াজ বেটে রাখতে হবে। তারপর ছাকনি দিয়ে তার রস বের করেতা আমাদের চুলে এবং মাথার তালুতে লাগাতে হবে। এরপর মাথা ঢেকে তা মোটামুটি ২ ঘণ্টার জন্য রেখে দিতে হবে। সময় হয়ে গেলে মাথায় হালকা গরম পানি এবং শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতি তা প্রথমে পর পর ৩ দিন অনুসরণ করে তারপর সপ্তাহে একদিন লাগাতে হবে। এইভাবে যতদিন না আমরা পুরো উকুন মুক্ত হচ্ছেন ততদিন মাসে ১ দিন করে লাগাতে হবে।

মেয়োনিজ: মেয়োনিজ আরেকটি সহজ উপায় যা উকুন মা রতে সাহায্য করে। মেয়োনিজ চুলে লাগালে মেয়োনিজ উকুনকে শ্বাস’রো’ধ করে দেয় এবং অবশেষে উকুন গুলো মা রা যায়। প্রথমে চুলে মেয়োনিজ লাগিয়ে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা সেটা রেখে দিতে হবে। ৫-৬ ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর হেয়ার ড্রাইয়ের দিয়ে চুল শুকোতে লাগবে। এর পর সরু দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুলের উকুন এবং নিটগুলো ঝেড়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে একবার করে ২ মাস অনুসরণ করতে হবে পুরোপুরি উকুন তাড়ানোর জন্য।

উল্লেখ করা প্রত্যেকটি মিশ্রণ লাগিয়ে কিন্তু অবশ্যই শাওয়ার ক‍্যাপ বা কোনো প্লাস্টিক দিয়ে আমাদের চুল ঢেকে রাখতে হবে। যেমন দিন উল্লেখ করা আছে ঠিক সেই সময় মতই আমাদের উল্লেখিত মিশ্রণটি লাগাতে হবে। যেকোনো একটি পদ্ধতিই উকুন মারতে সক্ষম।

চুলের ডগা ফাটা রোধে ৫ উপায়….

লম্বা আর সুন্দর চুল অথচ একটু বাড়তে না বাড়তেই ডগা ফেটে যাচ্ছে? একটু আচড়াতেই ভেঙে ভেঙে পড়ে যাচ্ছে আর বারোটা বাজাচ্ছে চুলের সৌন্দর্যের? এমনটা হলে মুশকিল। কারণ নিয়মিত পরিচর্যার অভ্যাস না থাকলে এমনটা চলতেই থাকবে। চলুন জেনে নেয়া যাক এর সমাধানে কিছু করণীয়-

চুলের ডগা ফাটার কারণ:
১. রুক্ষতা
২. চুলে পুষ্টির অভাব

৩. অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানো
৪. ময়লা

৫. নিয়মিত চুলের আগা না কাটা
৬. সুষম খাদ্য না খাওয়া।

কী খাবেন:
চুল ফাটার একটি প্রধান কারণ হলো পুষ্টির অভাব। যেহেতু প্রোটিনের অভাবে চুল মলিন হয়ে যায় তাই দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস খেতে হবে নিয়মিত এবং পরিমিত পরিমাণে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কখনো কখনো মিনারেলের ও প্রয়োজন হতে পারে, এজন্য মিনারেল সমৃদ্ধ ভিটামিন যেমন সুপারভিট এম ক্যাপসুল প্রতিদিন একটা করে ২/৩ মাস খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল-ও চুলের জন্যে খুব উপকারী। খুব ভালো সমাধান চাইলে এটি ৬ মাস খেয়ে দেখতে পারেন।

জেনে নিন কোন কাজ গুলো করলে মুক্তি পাবেন এই সমস্যা থেকে-

১. ভেজা চুল আলতো করে মুছুন। গোসল সেরে মাথায় তোয়ালে না জড়িয়ে পুরনো নরম সুতির জামা বা দোপাট্টা জড়িয়ে নিন। তোয়ালে ভেজা চুল আরও ফ্রিজি করে দেয়।

২. দ্রুত চুল শুকাতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন অনেকেই। কিন্তু এই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা থেকে যত দূরে থাকবেন, চুল ততই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকবে। একান্তই যদি ব্যবহার করতে হয়, তাহলে সবচেয়ে কম হিটে ড্রায়ার চালান। চুল থেকে অন্তত ৬ ইঞ্চি দুরে রাখুন ড্রায়ারের মুখ।

৩. ঝটপট চুল স্ট্রেট করতে হেয়ার স্ট্রেটনারের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। আপনারও যদি সেই অভ্যাস থাকে তবে হেয়ার স্ট্রেটনারের ব্যবহার কমান। একান্তই ব্যবহার করতে হলে তার আগে চুলে প্রোটেক্টিং সেরাম বা স্প্রে লাগিয়ে নিন।

৪. চুলের কন্ডিশনিং কিন্তু মাস্ট। শ্যাম্পু করার আগে নারিকেল তেল গরম করে স্ক্যাল্পসহ সারা চুলে লাগান। আধঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন। শ্যাম্পু শেষে আপনার চুলের প্রকৃতি অনুযায়ী কন্ডিশনার লাগাতে ভুলবেন না।

৫. ছয় মাস অন্তর চুলের ডগা ট্রিম করে নিন। এতে চুলের আগা ফাটা বন্ধ হবে, চুল দ্রুত বাড়বেও।