বখতিয়ার মেম্বারের ৫১ লাখ টাকা লুট করে ওসি প্রদীপ ও মর্জিনা

1977

অভিযানের সময় ৫ টাকার পয়সাও নিয়ে গেছেন উখিয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মর্জিনা আকতার। পাশাপাশি ওসি প্রদীপের সঙ্গে মিলে মা, বোন ও আমাকে নি’র্যা’ত’ন করেছেন অ’মা’নু’ষি’কভাবে।

তারা ১৮ লাখ টাকার নেয়ার কথা বলে নিয়ে গেছে ৫১ লাখ টাকার বেশি। ওই দুই ওসি এই ন্যাক্কারজনক অভিযানে আমার নির্দোষ শ্বশুরকে যেমন নিয়ে গেছে, একই সঙ্গে নিয়ে গেছে আমাদের সহায় সম্বলও।

উপরের কথাগুলো বলেছেন কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য কথিত ব’ন্দু’ক’যু’দ্ধে সম্প্রতি সময়ে নি’হ’ত বখতিয়ার মেম্বারের পুত্রবধূ রোমানা শারমিন।

তিনি জানান, পাশাপাশি পরিবারের সব পুরুষ সদস্যদের মামলা দিয়ে করেছে এলাকা ছাড়াও। যে কারণে প্রতিনিয়ত চরম নি’রা’পত্তাহীনতায় চলছে তাদের পরিবার পরিজনের জীবনযাত্রা।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নি’হ’তে’র মাত্র সাত দিন আগে (২৩ জুলাই) আরেকটি ভয়াবহ কথিত ব’ন্দু’যু’দ্ধে’র ঘটনা ঘটায় তৎকালীন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতার।

ওই দুই থানার ওসির যৌথ নেতৃত্বে ওই দিন ভোর রাতে উখিয়ার রাজাপালংয়ের ইউপি মেম্বার বখতিয়ারকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।

বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী শাহিন আকতার বলেন, “পুলিশের দাবি ছিল গাড়িতে একজন আসামি আছে তাকে শনাক্ত করতে হবে। তাই বাড়ির বাইরে আসতে হবে। কিন্তু দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই রাক্ষসী বা’ঘে’র মত থাবা দিয়ে নিয়ে যায় মেম্বারকে।

পরে অনেক খোঁজাখুজির করে খবর পাওয়া যায়নি। একই দিন সন্ধ্যায় পুনরায় ওসি প্রদীপ ও ওসি মর্জিনা নেতৃত্বে ৪০/৫০ জনের পুলিশের একটি দল অভিযান চালায় আবারো বাসায়। ওসি প্রদীপ ওই সময় বলেন, ‘বখতিয়ার মেম্বার বলেছে আলমারিতে ১৮ লাখ টাকা আছে।

ওই টাকা বের করে দাও’। যখন পুলিশের কথামত টাকা বের করা না হয় তখন আমাকে (শাহীন আক্তার) হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে রেখে পরিবারের সকল মেয়েদের ওপর চলে অমানুষিক অ’ত্যা’চা’র। শেষমেষ ১৮ লাখ টাকা দিতে রাজি হই আমি।

পরে টাকা বের করতে না করতে আলমারির সকল ড্রয়ার ও ঘরের সমস্ত্র লকারে চলে ব্যাপক ভাংচুর। একপর্যায়ে নিয়ে যায় ৫১ লাখ টাকারও বেশি। এই সময় উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতার নিজেই শপিং ব্যাগে করে নিয়ে যায় ভাংতি পয়সাও।

পর দিন মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) রাত ১২টার দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে টেকনাফের হ্নিলায় ‘ব’ন্দু’ক’যু’দ্ধে’ দু’জন মা’রা গেছে। রাত আড়াইটার দিকে টেকনাফ ভয়েস নামের একটি ফেসবুক পেজে এমন খবরও আসে। সেখানে যোগাযোগ করে জানতে পারি বখতিয়ার মেম্বার ও মোহাম্মদ তাহের নামের দুজনের ‘মৃ’ত্যু হয়েছে ‘ব’ন্দু’ক’যু’দ্ধে’। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসে তাদের লা’শ।

এর আগে ২৩ তারিখ রাতেই একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয় টেকনাফ থানায়। আসামি করা হয় ১৫ জনকে। তারপর অ’স্ত্র মা’মলাসহ আরও একটি মামলা হয়। যাতে আ’সা’মি করা হয় আমার তিন ছেলেকে। মামলার সিজার লিস্টে উদ্ধার দেখানো হয় ১০ লাখ টাকা।

বখতিয়ার মেম্বারের ছেলে হেলাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আবার বাবার বিরুদ্ধে টেকনাফ বা উখিয়া থানায় কোন মামলা বা জিডিও ছিল না। কিন্তু সম্পূর্ণ অর্থের লোভে পড়ে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ টাকা জন্য আবার পিতাকে খু’ন করেছে।

ধরার আগের দিন আর কথিত ব’ন্দু’ক’যু’দ্ধে’র পরের দিন পরপর তিনটি মামলা করেছে ওসি প্রদীপ। তিনটিতে আসামি করা হয়েছে আমরা তিন ভাইকে। নগদ ৫১ লাখের বেশি টাকাসহ জমির দলিল নিয়ে গেলেও মামলায় জব্দ দেখানো হয়েছে শুধু ১০ লাখ টাকা। ফেরত দেয়নি দলিলও। বর্তমানে আমার পরিবার অসহায়। আমরা সঠিক তদন্তপূর্বক বিচার ও টাকা এবং জমির দলিল ফেরত চাই।

বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী শাহীন আক্তার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরো বলেন, “বাসায় এসে পুলিশ বলে ‘টেনশন করবেন না। একজন আসামিকে চিহ্নিত করতে তাকে নিয়ে যাচ্ছি’। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মা’দ’কে’র কোন মামলা ছিল না।

বাসায় প্রবেশ থেকে শুরু করে বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সময়টি ছিলো ৫ থেকে সাত মিনিট। যা সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড রয়েছে। পরে সন্ধ্যায় এসে অমানুষিক নি’র্যা’ত’ন চালিয়ে নগদ ৫১ লাখের বেশি টাকাসহ জমির দলিল নিয়ে যায় এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ভাং’চু’র করে ডিভাইসসহ সব কিছু লু’ট’পা’ট করে নিয়ে যায়।”

বখতিয়ার মেম্বারের পুত্রবধূ রোমানা বলেন, আমি ওসি প্রদীপকে বলেছিলাম মহিলা পুলিশ কই? পুরুষরা কেন আমার শাশুড়িকে অ’ত্যা’চা’র করতেছে। তিনি হজ করে এসেছেন। এই কথার বলার পরই ওসি প্রদীপ আমাকে (রোমানা)এমন একটা চড় মারেন জীবনে আমি এরকম মা’র খাইনি কারো কাছ থেকে।
রোমানা আরো বলেন, ওসি প্রদীপ দাশ যেমন টাকা নিছে তেমনি মর্জিনা ভাংতি পয়সাসহ নিয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকা বলে আমাকে পুলিশ নিয়ে থাকতে হয়েছে। ওটা টেকনাফ থানার ব্যাপার। ওরা ভাল বলতে পারবে। টাকা নিতে দেখছি। তবে আমি নেইনি। টাকার ব্যাগ দেখেছি ওখানে কত ছিল আমি জানি না।’