শৈশবে আমাদের ত্বক যতটা কোমল থাকে, তারুণ্যে তার অনেকটাই উধাও হয়ে যায়। আবার বয়সের সাথে সাথে তারুণ্যের সতেজতা, ত্বকের টানটান ভাব হারাতে থাকে।
বয়স বাড়লে তার ছাট সবার আগে পড়ে মুখে আর গলায়। সৌন্দর্য হারাতে কে চায়! তাই আমরাও সচেষ্ট থাকি বয়সের ছাপ যতটা ঠেকানো যায়।
আমাদের ত্বককে টানটান রাখে কোলাজেন নামক এক ধরনের উপাদান। বয়সের কারণে ত্বকের কোলাজেন সিন্থেসিসের হারে মন্দা আসতে বাধ্য।
আর কোলাজেনের কার্যকারিতা কমতে আরম্ভ করলেই বলিরেখা পড়বে। তারপর ক্রমশ ত্বক আলগা হতে আরম্ভ করবে- এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এই পদ্ধতিটা একবার শুরু হয়ে গেলে আর পরিবর্তন করা যায় না, তবে হ্যাঁ, নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চললে অবশ্যই ঠেকিয়ে রাখা যায়, গতিটা বিলম্বিত হয়।
বাজারে অনেক রকম অ্যান্টি এজিং ক্রিম পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। এদিকে সামান্য কয়েকটি ঘরোয়া সমাধানই আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারে প্রথম যৌবনের তারুণ্য।
যেকোনো এন্টি এজিং ক্রিমের চেয়ে ভালো কাজে দেয় ঠান্ডা কনকনে পানির ব্যবহার। সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর যদি ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখে মাসাজ করা যায় রোজ, তাহলেই ত্বক বহুদিন ভালো থাকবে। তবে সরাসরি ত্বকে বরফ লাগাবেন না, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণেও ত্বক কুঁচকে যায়।
ত্বক সতেজ রাখতে খুব ভালো কাজ করে নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, সরিষার তেল বা আমন্ড অয়েল। আপনার ত্বকে কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে সেটা অবশ্য আপনাকেই বুঝে নিতে হবে। খুব ভালো মানের তেল কেনা আবশ্যক।
মুখে, ঘাড়ে, গলায় আলতো হাতে মালিশ করুন গোসলের আগে ও রাতে শোওয়ার আগে। ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে কিন্তু বলিরেখার পড়ার আশঙ্কাও বাড়বে। আর্দ্র ও কোমল ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না চট করে।
মুলতানি মাটি, ডিমের সাদা অংশ আর অ্যালোভেরা জেলের মাস্ক মুখ আর গলার ত্বক টানটান রাখতে খুব কার্যকর। অ্যালোভেরা জেল প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
ডিমের সাদা অংশ আর মধুর মাস্ক মাসে তিনবার আর মাড প্যাক সপ্তাহে একবার ব্যবহার করা যায়। দই-মধু বা পাকা পেঁপে-মধুর প্যাকও খুব ভালো। তবে প্যাক মেখে চুপচাপ শুয়ে থাকবেন। ভুরু কোঁচকানো, হাসা সব বারণ- তাতেও কিন্তু বলিরেখা পড়তে পারে।
খুশকি তাড়াতে যা করবেন….
খুশকির বিরুদ্ধে লড়াই করে করে ক্লান্ত? নানারকম শ্যাম্পু আর উপাদান ব্যবহার করেও সমাধান পাচ্ছেন না? মন খারাপ করবেন না। আপনি একা নন, আপনার মতো এমন সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। খুব সাধারণ একটি উপাদান ব্যবহার করেই খুশকি দূর করতে পারবেন। সেটি হলো মেথি।
মেথির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল আর অ্যান্টিফাঙ্গাল, দুটি গুণই রয়েছে। তা ছাড়া প্রোটিন, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম, নিকোটিনিক অ্যাসিড আর লেসিথিনেরও ভাঁড়ার রয়েছে মেথিতে, যা একসঙ্গে মিশে মাথা থেকে খুসকি তাড়াতে সাহায্য করে। মাথায় নানাভাবে মেথি ব্যবহার করতে পারেন। তাতে খুশকি কমার পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে, চুলের গোড়া শক্তও হবে।
মেথিবাটা-
একটা বাটিতে দুই টেবিলচামচ মেথি নিয়ে সারারাত পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মিহি করে বেটে নিন। এই বাটাটা স্ক্যাল্পে আর চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার অবশ্যই লাগাবেন। সপ্তাহে একবার করলেই বিদায় নেবে খুশকি।
মেথি-লেবুর রস-
দুই টেবিলচামচ মেথি সারারাত পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে বেটে নিন, তারপর তাতে এক টেবিলচামচ লেবুর রস যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটা স্ক্যাল্পে আর চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে কোমল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার করতে হবে। লেবুর রসে চুল চকচকে হয়ে উঠবে, মেথি তাড়াবে খুশকি।
মেথি-টক দই-
রাতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে বেটে নিন, তাতে যোগ করুন আধ কাপ টক দই। এবার আগের মতোই মাথায় আর চুলে মেখে আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। দই চুল নরম আর আর্দ্র রাখবে, আর মেথি পরিষ্কার করবে স্ক্যাল্প।
মেথি-নারিকেল তেল-
সারারাত ভেজানো মেথি সকালে উঠে বেটে তাতে দুই টেবিল চামচ নারিকেল তেল যোগ করুন। চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন। নারিকেল তেলের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। মেথির সঙ্গে মিলে নারিকেল তেল মাথায় পুষ্টি জোগায়, চুল সুস্থ খুশকিমুক্ত রাখে।