মেয়েকে ডাক্তার বানাতে নিয়ে প্রতিদিন ১২ কিমি পাড়ি দেন বাবা !

1760

মিঞা খানের তিন মেয়ে- ঝাঁ-চকচকে রাস্তা নয়। এবড়োথেবড়ো, পাথুরে পথ। কিন্তু মেয়েদের লেখাপড়া শেখার ইচ্ছার কাছে এটা কোনো বাধা?

সে কারণে স্বেচ্ছায় বাইকে করে প্রতিদিন ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দেন মিয়া খান।

এভাবে প্রতিদিন তিন মেয়েকে রেখে আসা-নিয়ে আসা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়েও থাকেন অনেক সময়। স্কুল ছুটি হলে একবারে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

আফগানিস্তানে রয়েছে সুইডিশ কমিটি নামে এক এনজিও-র নুরানিয়া স্কুল। সেখানেই পড়াশোনা করে মিঞা খানের তিন মেয়ে। প্রতিদিন তিন মেয়েকে মোটরবাইকে চাপিয়ে স্কুলে পৌঁছে দেন বাবা। আশেপাশের অনেকেই বাঁকা চোখে তাকান।

লোকসমাজে ভালোমন্দ অনেক কথাই শুনতে হয় মিঞা খানকে। তবে সেসবের পরোয়া করেন না এই তিন মেয়ের বাবা।

কেউ জিজ্ঞেস করলে মিষ্টি হেসে বলেন, “মেয়েদের পড়াশোনা আমার কাছে সবচেয়ে জরুরি। আমাদের এলাকায় কোনও মহিলা ডাক্তার নেই। পড়াশোনা করিয়ে ওদের ডাক্তার বানাতে চাই।”

তিন মেয়ের পাশাপাশি ছেলেও রয়েছে মিঞা খানের। তবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বেশি গুরুত্ব দিতে চান না এই বাবা। তাঁর কথায়, “আমি নিজে নিরক্ষর। দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাই। তাই শিক্ষা আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।

আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ইচ্ছে যে তিন মেয়েকে নিজের ছেলেদের মতোই পড়াশোনা করাবো। শিক্ষিত করে তুলবো।” ক্লাস সিক্সে পড়ে মিঞা খানের এক মেয়ে রোজি। তাঁর কথায়, “আমি ভাগ্যবান যে পড়াশোনা করতে পারছি।

বাবার সঙ্গে সঙ্গে দাদারাও আমাদের তিন বোনকে খুব উৎসাহ দেয়। প্রতিদিন মোটরসাইকেলে করে স্কুলে পৌঁছে দেয়। ছুটি হলে বাড়িও নিয়ে আসেন।”

নেট দুনিয়ায় ভা’ই’রা’ল হয়েছে মিঞা খানের জীবনের গল্প। তাঁর রোজনামচা শুনে মুগ্ধ নেটিজেনরা। সকলেই বলছেন, “এমন বাবা যেন সব মেয়ের থাকে। উনি সত্যিই একজন হিরো। ওঁকে কুর্নিশ।”

নরওয়েতে প্রতিদিন গড়ে ৮ জন ইসলাম গ্রহণ করছেন !

নরওয়ে উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডেনিভিয়ান দেশ। দেশটিতে যখন ‘স্টপ ইসলামাইজেশন’-এর নামে ইসলাম ও মুসলমানদের নি’ষি’দ্ধে’র জোর দাবিতে আন্দোলন করছে একটি ইসলাম বি’দ্বে’ষী দল।

ঠিক তখনই ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য এসেছে অনেক বড় সুখবর। নরওয়েতে প্রতিদিন গড়ে ৮ জন ভিন্নধর্মী লোক মুসলমান হচ্ছে।

ইউরোপের এ দেশটিতে ইসলাম গ্রহণের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির জনপ্রিয় দৈনিক ভারডেনস গ্যাঙ্গে-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

নরওয়ের সুপ্রাচীন ও সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অসলো বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল স্টাডিজ অ্যান্ড অরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের একজন গবেষকের বরাতে ভারডেনস গ্যাঙ্গে-এর প্রতিবেদন বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় তিন হাজার নরওয়েজিয় নাগরিক ইসলাম গ্রহণ করছে। যা ১৯৯০ সালের সময় থেকে ৬ গুণেরও বেশি।

প্রতিবেদনের হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ইসলাম গ্রহণকারী মুসলিমের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৮ জনেরও বেশি। ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগে নরওয়ের নারীরা মুসলিম পুরুষদের বিয়ে করতে বেশি আগ্রহী ছিল।

তবে মুসলিম পুরুষদের বিয়ে করার এ প্রবণতা আগের চেয়ে এখন কমে গেলেও নারীদের মধ্যে বেড়ে গেছে ইসলাম সম্পর্কে পরিপূর্ণ অধ্যয়ন ও গবেষণা। যার ফলে আগের তুলনায় ইসলামের দিকে ঝুঁকছে বেশির ভাগ নারী ও পুরুষ।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় নরওয়ের ইসলাম গ্রহণকারী ২ নারীর বক্তব্যে ইসলাম গ্রহণের বিষয়গুলো সুস্পষ্ট। তাদের মতে-

মনিকা সালমুক নরওয়েজিয় ইসলাম গ্রহণকারী নারী মনিকা সালমুক। ৪ বছর আগে ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা ও অধ্যয়ন শুরু করে সে। বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে অধ্যয়নের পর সে নিজের জন্য ইসলামকে বেছে নেয়।

সোলভা নাবিলা স্যাক্সেলিন

৪২ বছর বয়সী নরওয়েজিয় স্বেচ্ছাসেবী নারী সোলভা নাবিলা স্যাক্সেলিন। নরওয়েতে আশ্রয় নেয়া মুসলিম শরণার্থীদের সাহায্যে তিনি কাজ করেন। মুসলিম শরণার্থীদের সহযোগিতা করতে তাদের সংস্পর্শে গিয়ে ইসলাম গ্রহণের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সোলভা নাবিলা স্যাক্সেলিন।

নরওয়েতে ইসলাম

১৯৫০ সালের দিকে নরওয়েতে মুসলমানের অবস্থান স্পষ্ট ছিল না। ১৯৬০ সালের দিকে দৃশ্যমান হতে থাকে মুসলিমদের অবস্থান। নরওয়ের রাজধানী অসলোতে ১৯৭৪ সালে প্রথম মসজিদ গড়ে ওঠে।

১৯৬০ সালের পরবর্তী সময়ে নরওয়েতে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে বর্তমানে নরওয়েতে মুসলমানরা দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। গত ২০১১ সালের তথ্য মতে নরওয়েতে মোট জনসংখ্যার ২.৩ শতাংশ মুসলিম।

উল্লেখ্য যে, চলতি বছরের জুন মাসে ‘স্টপ ইসলামাইজেশন’ গ্রুপের এক সভায় ইসলাম, কুরআন ও হিজাবের ব্যাপারে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুলিশি প্রহরায় এক জনসমাবেশে প্রকাশ্যে পবিত্র কুরআনুল কারিম ছুঁড়ে ফেলেন অ্যানা ব্রাটেন নামে এক নারী নেত্রী।

সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা কুরআনের কপিটি সংরক্ষণে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে অ্যানা ব্রাটেন পবিত্র কুরআনের কপিটি প্রতিবাদকারী মুসলিমের দিকে ছুড়ে ফেল দেন।

এ ঘটনার ৪ মাসের ব্যবধানে অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল স্টাডিজ অ্যান্ড অরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের গবেষণার ফলাফল ও ভারডেনস গ্যাঙ্গে-এর প্রতিবেদনটি ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য অনেক বড় সুসংবাদ।