যুক্তরাষ্ট্রে করোনা রোধে বিলবোর্ডে মুহাম্মদ (সা.) এর বাণী !

1222

প্রতিদিনই হু হু করে করোনা’ভা’ইরা’সে আ’ক্রা’ন্তের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে । এখন পর্যন্ত করো’নায় সবচেয়ে বেশি বিধ্ব’স্ত হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে দেশটিতে মৃ’তের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে ক’রো’না সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ডে ব্যবহার করা হয়েছে ইসলামের সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বাণী।

বিলবোর্ডটিতে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর একটি বাণী লেখা রয়েছে। তার হাদিসের বরাত দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, ‘সং’ক্রামক রোগের সময় তোমরা বারবার হাত ধোও, সং’ক্রামিত এলাকায় প্রবেশ করো না এবং সং’ক্রামিত এলাকা থেকে বাইরে যেও না।’

যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে টাঙানো এ বিলবোর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভা’ইরা’ল হয়ে পড়েছে। গেইনপিচ নামে একটি অলাভজনক সংস্থা শিকাগোর ওহারে বিমানবন্দরের অদূরে এই বিলবোর্ডটি স্থাপন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ভিত্তিক ইসলামি সংস্থাটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। সংস্থাটির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাধারণ মার্কিন জনগণের মধ্যে সঠিক ইসলামি জ্ঞান বিতরণ করা। এ ছাড়া দেশটিতে ক্রমবর্ধমান ইসলাম ভীতি দূর করা। যাতে ইসলামি মূল্যবোধ সম্পর্কে তারা যথাযথভাবে জানতে পারে।

দুনিয়াতে কখনো কখনো ম’হামা’রি আসে মানুষকে পরীক্ষার জন্য। আবার কখনো কখনো অবাধ্য মানুষকে শা’স্তি দিতে। সে মহামা’রির কবলে পড়ে জীবন ও সহায়-সম্পদ হারান অ’পরা’ধী কিংবা নিরপরাধ সব মানুষ। কুরআনুল কারিমে এমন আজাবকে (মহামা’রি) ভ’য় করার কথা বলা হয়েছে- ‘তোমরা এমন শা’স্তি থেকে দূরে থাক, যা বিশেষভাবে তোমাদের মধ্যে যারা জা’লিম, (শুধু) তাদেরকেই আ’ক্রম’ণ করবে না। আর জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ শা’স্তিদানে খুবই কঠো’র।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২৫)

আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন কোনো অঞ্চলে আ’জাব বা গ’জব আসে তখন তা ওই অঞ্চলে বসবাসকারী ঈমানদার কিংবা বেঈমান সবাইকে আ’ক্রম’ণ করে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে তা সুস্পষ্ট। হাদিসে এসেছে- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ্‌ কোনো সম্প্রদায়ের উপর আ’জাব পাঠান তখন সেখানে বসবাসরত সবার উপরই সেই আজা’ব পতিত হয়। অবশ্য পরে প্রত্যেককে তার আমল অনুযায়ী উঠানো হবে।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

উল্লেখিত হাদিসটি প্রমাণ করে যে, যখন আল্লাহ তাআলা কোনো সম্প্রদায়ের গোনাহের কার’ণে তাদের উপর কোনো আজাব দেন তখন তা ভালো-মন্দ সবার উপরই নেমে আসে। মহামা’রি আক্রা’ন্ত অঞ্চলে যদি কোনো নিরপরাধ ভালো মানুষও থাকে সেও ওই মহামা’রিতে আ’ক্রা’ন্ত হয়।

হজরত যায়নাব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা বিশ্বনবিকে প্রশ্ন করেন, আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকা অবস্থায়ও কি আমরা ধ্বং’স হয়ে যাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ’, যখন নোংরামির মাত্রা বেড়ে যাবে।

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, যখন গ’র্হিত ও গো’নাহের কাজ প্রকাশ পাবে তখন সবার ধ্বং’স অনিবা’র্য হয়ে পড়বে। তবে সৎ ও মন্দ লোকের মৃ’ত্যুর ব্যাপারে অংশীদারিত্ব, নেকি ও শা’স্তির ব্যাপারে অংশীদারিত্বকে অপরিহার্য করবে না। বরং তাদের প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ আমলের নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে।

এ ক্ষেত্রে সৎ লোকের উপর আজাবের উদ্দেশ্য হবে তাদেরকে পবিত্র করা আর মন্দ লোকের জন্য শা’স্তি দেয়া।’ (ফাতহুল বারী) সুতরাং চলমান মহামা’রি করো’নাভা’ইরা’সে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা- হে আল্লাহ! আপনি ম’হামা’রি ক’রো’না থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্তি দিন। মহামা’রি ক’রো’নাকে আপনি মানুষের ওপর থেকে তুলে নিন।

ম’হামা’রি কা’রো’নায় এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১৯ জনের প্রা’ণহা’নি ঘটেছে। এদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহর একান্ত প্রিয় বান্দা। তারাও রক্ষা পায়নি এ ম’হামা’রি থেকে। হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী তারা একদিকে পাবে শাহাদাতের মর্যাদা আবার অন্যদিকে পাবে তাদের আমল অনুযায়ী প্রতিদান।

সুতরাং ম’হামা’রি ক’রো’নায় কে মা’রা গেল আর বেঁচে থাকলো। কে ভালো লোক আর কে মন্দ লোক এসব বাচাই করার সুযোগ নেই। কোনো জাতির ওপর আল্লাহর আজাব নেমে এলে- কে ভালো, কে মন্দ তা পার্থক্য করা হয় না। এমনকি নেককার মানুষও বি’প’দ, আজাব ও ম’হামা’রি দ্বারা আ’ক্রা’ন্ত হতে পারে।

মুমিন ও কাফেরদে বি’প’দে রয়েছে পার্থক্য। কাফের অবাধ্য-অবিশ্বাসীদের জন্য বি’পদ-আপদ আসে আজাবস্বরূপ। কিন্তু ঈমানদারের জন্য বিপ’দ-আপদ-ম’হামা’রি রহমতস্বরূপ। হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যেসব বি’পদ-আপদ আসে। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা তার পাপ দূর করে দেন। এমনকি যদি (সামান্য) কাঁটাও তার শ’রী’রে ফোটে, এর দ্বারাও।’ (বুখারি)

এমন ধারণা করা ঠিক নয়, কেননা মহামা’রিতে কোনো নেককার ব্যক্তি আ’ক্রা’ন্ত হবে না এ মর্মে কোনো দিকনির্দেশনা কুরআন এবং হাদিসে আসেনি। বরং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সবচেয়ে বেশি রোগ যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেয়ে বেশি রোগ যন্ত্রণা ভোগকারী অন্য কাউকেও দেখিনি।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে তিনি বলেন, এটি হচ্ছে এক ধরনের আজাব। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছা করেন, পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দেন। অতএব প্লেগ রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে, এই বিশ্বাস নিয়ে নিজ শহরে অবস্থান করতে থাকে যে আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না, তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহিদের সমান সওয়াব।’ (বুখারি)

তারপরও মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ- হে আল্লাহ! মহামা’রি করোনা থেকে আপনি পুরো জাতিকে হেফাজত করুন। আপনিই সেরা আরোগ্য ও নিরাপত্তা দানকারী। যেভাবে দোয়া করতে বলেছেন বিশ্বনবি-
– اَللَّهمَّ اِنِّيْ اَسْاَلكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্‌আলুকাল আ-ফিয়াতা ফিদ-দুন্‌ইয়া ওয়াল আখিরাহ।’ (তিরমিজি)
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে দুনিয়া এবং পরকালের সার্বিক নিরাপত্তা ও প্রশান্তি প্রার্থনা করছি।

– يَا مُنْزِلَ الشِّفَآءِ وَ مُذْهِبَ الدَّآءِ اَنْزِلْ عَلٰى وَجَعِيَ الشِّفَآءِ. اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمَاً
উচ্চারণ :‘ ইয়া মুংযিলাশ-শিফায়ি ওয়া মুজহিবাদ দায়ি আংযিল আলা ওয়াঝায়িয়াশ-শিফায়ি, ইশফি আংতাশ-শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআন লা ইয়ুগাদিরু সাক্বামা।’

অর্থ : হে সুস্থতা নাজিলকারী। হে রোগের প্রতিষে’ধক দানকারী। আমাদের জন (সব মহামা’রি) রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার শেফা/চিকিৎসা নাজিল করুন। আপনি সুস্থতা দান করুন। আপনিই রোগ নিরাময়কারী। আপনি ছাড়া সুস্থতা দানকারী আর কেউ নেই। এমন সুস্থতা দান করুন, যাতে আমাকের মধ্যে আর কোনো রোগ অবশিষ্ট না থাকে।’

– اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মা’তাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কু’ষ্ঠু রোগে আ’ক্রা’ন্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরা’রো’গ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

পরিশেষে…

হে আল্লাহ! আপনি যুগে যুগে আপনার নবি-রাসুলদের অনেক রোগ-ব্যা’ধি দিয়েছেন। আবার তাদের আরোগ্য দান করেছেন। আপনিই সেরা আরোগ্য দানকারী। আপনার কাছেই প্রার্থনা। আপনি আপনার বান্দাদের প্রতি রহমত নাজিল করুন। ম’হামা’রি ক’রো’না থেকে মুক্তি দিন।