বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি মিলিলিটারে ১৫ মিলিয়ন শুক্রাণু থাকলে সেটিকে পরিপক্ব শুক্রাণু বলে। এর চেয়ে নিচে নেমে গেলে তা অস্বাভাবিক। আর শুক্রাণুর গুণগত মান কম হলে পুরুষের বন্ধ্যত্ব হয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দেহে ভিটামিন ও জিংকের ঘাটতি থাকলে পুরুষের বন্ধ্যত্ব হতে পারে।
তবে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলে শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়ে। শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে কিছু খাবারের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিকেল নিউজ টুডে ও মম জাঙ্কশন কিছু তথ্য দিয়েছে। যেমন-
টমেটো
টমেটোর মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন। এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে কাজ করে। টমেটো রান্নার ক্ষেত্রে জলপাইয়ের তেলও দিতে পারেন। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শোষণ ভালো হয়।
ওয়ালনাট
ওয়ালনাটের মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। সোসাইটি ফর দ্য স্টাডি অব রিপ্রোডাকশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন ৭০ গ্রাম ওয়ালনাট খাওয়া ২১ থেকে ৩৫ বছরের পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর জীবনীশক্তি, ক্ষিপ্রতা বাড়ায়। ওয়ালনাট সালাদের সঙ্গে খেতে পারেন। এ ছাড়া স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন এ সুস্বাদু বাদামটি।
কুমড়ো বীজ
কুমড়ো বীজের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড ও ফাইটোসটেরল। এ খাবারটি পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। গবেষণায় দেখা যায়, কুমড়ো বীজে থাকা উপাদান টেসটোসটেরোন হরমোনের সিরামের মাত্রা বাড়ায়। এ ছাড়া শুক্রাণুর মাত্রা, জীবনীশক্তি, ক্ষিপ্রতা বাড়াতে কাজ করে।
কালো চকলেট
কালো চকলেটে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড এল-আরজিন। এটি শুক্রাণুর মাত্রা ও বীর্যের পরিমাণ বাড়ানোর উপাদান হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া এর মধ্যে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি ফ্রি র্যাডিকেলের সঙ্গে লড়াই করে। ফ্রি র্যাডিকেল শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। প্রতিদিন এক কামড় কালো চকলেটও শুক্রাণুর মান বাড়াতে উপকারী।
ডিম
বন্ধ্যাত্ব মোকাবিলায় খুবই উপকারী ডিম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই যা শুধু শুক্রাণুর সংখ্যাই বাড়ায় না, কার্যকারিতাও বৃদ্ধি করে। নিউট্রিশনিস্টদের মতে, নিয়মিত ডিম খেলে শুক্রাণুর সক্রিয়তাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
পালং শাক
সক্রিয় শুক্রাণুর জন্য জরুরি ফোলিক অ্যাসিড। শরীরে ফোলেটের মাত্রা কমতে থাকলে শুক্রাণুর সংখ্যাও কমে যায়। নিউট্রিশনিস্টদের মতে, পালং শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফোলিক অ্যাসিড যা শুক্রাণু কার্যকারিতা অনেক বাড়ায়। তা ছাড়া পালং শাক খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তিও অনেক বৃদ্ধি পায়।
কলা
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, নারীদের উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য যেমন প্রয়াস করা হয়, তেমনটা পুরুষদের জন্য করা হয় না। অথচ পরিসংখ্যান বলছে ৩০-৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ি পুরুষেরাই। নিউট্রশনিস্টদের মতে, পুরুষদের উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য কলা উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন বি১ ও সি যা হেলদি স্পার্ম তৈরি করতে সাহায্য করে।
ব্রোকোলি
পুরুষ হোক বা নারী, উর্বরতা শক্তি বাড়াতে ব্রোকোলির জুড়ি নেই। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি৯ বা ফোলিক অ্যাসিড যা শুক্রাণুর কর্মক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ব্রোকোলি খেলে স্পার্ম কাউন্ট প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
বেদানা
বেদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি শুক্রাণুর সক্রিয়তাও বাড়ায়। নিউট্রিশনিস্টরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন বেদানার রস খেলে পুরুষ ও নারীদের উর্বরতা শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়।
আখরোট
আখরোটে রয়েছে ওমেগা ৩-ফ্যাটি অ্যাসিড এবং আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড বা সংক্ষেপে এএলএ। এএলএ-র মতো ওমেগা অ্যাসিডের পাশাপাশি আখরোটে আছে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বহু মূল্যবান মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস। পুরুষদের উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে এই সব উপাদনগুলি।
যে ১০টি কারণে শুক্রাণু কমতে পারে
১) শারীরিক ও মানসিক ধকল
২) অনিদ্রা
৩) কোলে ল্যাপটপ রেখে কাজ করলে বা শুক্রাশয় গরম কিছুর সংস্পর্শে এলে
৪) জিঙ্কের ঘাটতি বা টক্সিক বেড়ে গেলে
৫) ধূমপান ও অতিরিক্ত ম’দ্য’পা’ন
৬) ওবেসিটি বা স্থূলতা
৭) ক্যানসার
৮) বংশগতভাবে
৯) হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা
১০) কিছু মেডিসিন ও স্টেরডের কারণেও পুরুষদের শুক্রাণু কমে ইনফার্টিলিটি দেখা দিতে পারে।