জর্ডানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী।
আন্তর্জাতিক এই আসরে ৬২ দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলেন তিনি। এছাড়া প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন কাতারের প্রতিযোগী, তৃতীয় স্থান বাহরাইন, চতুর্থ পাকিস্তান ও পঞ্চম স্থান অর্জন করেন সৌ’দি আর’বের প্রতিযোগী।
আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য ১৩ জুন জর্ডানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হাফেজ ক্বারী সাইফুর রহমান ত্বকী। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতা চলে ১৫ থেকে ২০ জুন পর্যন্ত।
ত্বকীর বাবা মাওলানা বদিউল আলম ধলপুর লিচুবাগান নাদিয়াতুল কোরআন হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল এবং রামপুরার বায়তুল আমান জামে মসজিদের খতিব।
হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী ২০১৪ সালে এনটিভি আয়োজিত পিএইচপি কোরআনের আলো প্রতিভার সন্ধানে প্রতিযোগিতায় প্রায় ত্রিশ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
২০১৫ সালে জেদ্দায় আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান, ২০১৬ সালে বাহরাইনে তৃতীয় স্থান ও ২০১৭ সালে কুয়েত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
দিনমজুর হয়েও পাঠাগার করার স্বপ্ন পূরণ করলেন ১৯ বছরের কিশোর…
মাথায় বহন করেন ইটের বোঝা। বোঝা নিয়ে ক্লান্ত মাথায় অক্লান্ত স্বপ্ন দেখেন শেখ মুহাম্মদ আতিফ আসাদ। বাড়ী জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের হাসড়া মাজালিয়া গ্রামে। বয়স প্রায় ২০। এই বয়সেই তারুণ্য শক্তি কাজে লাগিয়ে ব্যতিক্রম স্বপ্ন বুনেন হৃদয়ে। তার স্বপ্ন প্রত্যেক গ্রামে পাঠাগার হবে।
লাখ লাখ পাঠাগার হবে বাংলাদেশে। এই দৃশ্য দেখেই ম’রে যেতে চান আতিফ। এই আত্মতৃপ্তিতেই বই পড়ার আন্দোলনকে সার্থক মনে করেন তিনি। তার স্বপ্নকে ধারণ করে ইত্যিমধ্যে গ্রামে পাঠাগার গড়ে তুলেছেন। পাঠাগারের নাম মিলন স্মৃতি পাঠাগার।
ঘরের বারান্দায় পাট শোলা দিয়ে পাঠাগারের জন্য ছোট ঘর করেছেন। ২০১৮ সালের শুরুতে ছোট ঘরে মাত্র ২০ টা বই দিয়ে সূচনা করেন পাঠাগারটির। তবে এখন এখানে রয়েছে প্রায় হাজার খানেক বই। দিন মজুরের ছেলে আতিফের লেখাপড়ার ইচ্ছা প্রবল।
কিন্তু পড়ালেখার খরচ চালানোর মত সার্মথ্য ছিল না তার পরিবারের। লেখাপড়ার জন্য তাই মাঝে মাঝে লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রি, রডমিস্ত্রির কাজ, খাট বার্নিশ, ধান কাটার কাজ করতেন তিনি।
তবে দৈন্যতা তাকে বই পড়ায় বাধা দিলেও তার পাঠাগার তৈরির চিন্তাকে উদ্ভাবন করেছে। তিনি বলেন, আমার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজের পড়তে না পারার বিষয়টি আমাকে দারুন পোড়ায়। সাথে মাথায় আসে আমার মত গ্রামের অন্য তরুনদের কথা।
তাদেরও তো জ্ঞান অর্জন করা দরকার। জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার সেই ভাবনা থেকেই আমার পাঠাগার করার চিন্তা। তা বড় ভাইকে সাথে নিয়ে শুরু করে দিলাম পাঠাগার করার কাজ।
পাঠাগারের নাম মিলন স্মৃতি দেয়ার কারণ জানতে চাইলে আতিফ বলেন, আমার পাঠাগার করার ইচ্ছাকে আমার বড় ভাই খুব বড় করে দেখেছেন। আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন প্রবল। ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করে বাড়ীতেই শুরু করলাম পাঠাগার। যেহেতু টাকা নেই, ঘর ভাড়া করে শুরু করা আমার পক্ষ সম্ভব না তাই বাড়ীতেই শুরু করলাম।
এরপর জমিজমার বি’রো’ধে প্রভাবশালীদের হাতে বড় ভাইকে খু’ন করা হলে তার নামেই আবার নতুন উদ্যমে শুরু করলাম। ভাই যেহেতু শুরু থেকেই সাথে ছিলো, সবসময় অনুপ্রেরণা দিতো, উৎসাহ যোগাতো, তাই তার নামেই মিলন স্মৃতি পাঠাগার শুরু করলাম।
আতিফ পাঠকের সুবিধার কথা চিন্তা করে সাইকেলে করে সবাইকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দেন। আবার সপ্তাহ শেষে নিয়েও আসেন। ১০-১৫ কিলো দূর থেকেও ফোন করলে সাইকেল দিয়ে বাড়ীতে গিয়ে বই দিয়ে আসেন। বিনিময়ে নেন না কোনো পারিশ্রমিক। অনার্সে পড়ার পাশাপাশি এখন একাই এই কাজ করে যাচ্ছেন আতিফ।
প্রত্যেক গ্রামে একটি করে পাঠাগার হবে, গ্রামের সকল মানুষ যখন স্বাচ্ছন্দ্যে বই পড়বে, তখনি আতিফের বই পড়ার স্বপ্নটা বেঁচে থাকবে। তাই তিনি সকলকে বই পড়ার অনুরোধ করে বলেন, আপনারা সবাই বই পড়ুন, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন।