৭৬ বছরের বৃদ্ধা নিজ হাতে লিখলেন সম্পূর্ণ কুরআন !

4553

নিজ হাতে লিখলেন সম্পূর্ণ কুরআন- নিজ হাতে পুরো কোরআন লিখলেন ৭৬ বছরের এক মিশরীয় বৃদ্ধা। তার পুরো নাম জায়নাব আব্দুল গনি মুহাম্মাদ হুসাইন। সাত বছরের কর্মসাধনায় তিনি পবিত্র কোরআনের ৩০টি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন।ব্রাজিলে

পুণ্যবতী এ নারী মিশরের মিনিয়া প্রদেশের আল-তালিন গ্রামের অধিবাসী। তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।

জীবনসায়াহ্নে এসে নিজ হাতে পবিত্র কোরআনের ৩০টি পাণ্ডুলিপি লিখে তিনি অনন্যতার পরিচয় দিয়েছেন। নিজের লিখিত কোরাআন হাতে জায়নাব আব্দুল গনি মুহাম্মাদ হুসাইন প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন,

আমার পাঁচ ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। আমার পিতা সম্পূর্ণ কোরআনের হাফেজ ছিলেন। তিনি এডুকেশন সেক্টরে কাজ করতেন। তিনি আরো বলেন, আমি প্রায় ৭ বছর পূর্বে কোরআন লেখার কাজ আরম্ভ করি। সম্পূর্ণ কোরআন হেফজ করার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সময়স্বল্পতা ও আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন কারণে পরিনি।

এখন পর্যন্ত মাত্র ৬ পারা মুখস্থ করতে সক্ষম হয়েছি। এ জন্য আমার সবসময় খুব দুঃখবোধ কাজ করে। কিন্তু আমাদের এলাকার একজন নারী আমাকে পবিত্র কোরআন নিজ হস্তাক্ষরে লেখার জন্য পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করে।

এরপর থেকে আমি প্রতি রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রথম ৬ দিনে এক হাজার আয়াত লিখি। এতে আমার আগ্রহ আরো বেগ পায়। তাই সম্পূর্ণ কোরআন লেখায় মনোনিবেশ করি। গুরুত্ব ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তিনি আরো বলেন, আমি মাত্র ২৫ দিনে সম্পূর্ণ কোরআন লিখে শেষ করতে পেরেছি।

আমার সন্তান ঈমান ওমরার যাওয়ার সময় সঙ্গে করে একখণ্ড পাণ্ডুলিপি নিয়ে যাবে। আশা করছি, পবিত্র কোরআনের বিশেষজ্ঞরা আমার তৈরিকৃত পাণ্ডুলিপিটি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করবেন।

যে দুটি অপরাধের শাস্তি দুনিয়াতেই ভোগ করবে মানুষ

আল্লাহ তাআলা দুইটি অপরাধের শাস্তি আখেরাতের জন্য বাকি রাখেন না, দুনিয়াতেই তা দিয়ে থাকেন। যদি কোনো ব্যক্তি নামাজ না পড়ে তবে পরকালে তার শাস্তি হবে আবার আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

আল্লাহর অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো ইবাদত না করলে তিনি পরকালে হয় শাস্তি দেবেন নতুবা ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু দুটি অপরাধের শাস্তি আল্লাহ তাআলা পরকালের জন্য রাখবেন না বরং দুনিয়াতেই এ শাস্তি দিয়ে দেবেন। আর তাহলো-

১/ কারো প্রতি জুলুম করা।

২/ মা-বাবার অবাধ্য হওয়া।

– কারো প্রতি জুলুম করা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে ঘোষণা করেন-হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামেনে (দায়িত্বশীল করে) পাঠান, তখন তাকে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘মজলুমের (অত্যাচারিত ব্যক্তির) ফরিয়াদকে ভয় করবে। কারণ মজলুমের ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। (বুখারি)

হাদিসের নির্দেশনা শুধু মানুষের জন্য নয়। এ অ”ত্যা”চা”র বা জুলুম মানুষ তো দূরের কথা কোনো বন্য প্রাণীর সঙ্গেও করা যাবে না। কেননা আল্লাহর যেমন সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক; তেমনি প্রিয়নবি ছিলেন বিশ্বজাহানের জন্য রহমত।

জুলুম অনেক বড় মা”রা”ত্ম”ক অ”প”রা”ধ। যে অ”প”রা”ধে”র শাস্তি আখেরাতে নয় বরং দুনিয়াতেই ভোগ করতে হয়। তাই আল্লাহ তাআলা জুলুম বা অ”ত্যা”চা”রী”র সঙ্গী না হতে কুরআনে তার কাছে প্রার্থনা করার কথা শিখিয়ে দিয়েছেন। যাতে এ আয়াত দ্বারা মুমিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পার-আল্লাহ তাআলা সুরা আরাফের ৪৭ নং আয়াতে এ রকম একটি আয়াত নাজিল করেছেন। যাতে উম্মতে মুহাম্মাদি অ”ত্যা”চা”রী না হয়। দোয়াটি হলো-

رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ

উচ্চারণ : রাব্বানা- লা- তাঝআ’লনা- মাআ’ল ক্বাওমিজ জা-লিমিনি। (সুরা আ’রাফ : আয়াত ৪৭)

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে জালিমদের সঙ্গী করো না।’

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ক্ষমতাধর ব্যক্তি বিশেষের অ”ত্যা”চা”র থেকে বেঁচে থাকতেও শিখিয়েছেন দোয়া। যে দোয়ায় বান্দা তার কাছে দুনিয়ার যাবতীয় অ”ত্যা”চা”র থেকে বেঁ”চে থাকবে। দোয়াটি হলো-

رَبَّنَا لاَ تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ – وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা লা তাঝআলনা ফিতনাতাল লিল ক্বাওমিজ জ্বালিমিন। ওয়া নাঝ্‌ঝিনা বিরাহ্‌মাতিকা মিনাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’ (সুরা ইউনুছ : আয়াত ৮৫-৮৬)

অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর অ”ত্যা”চা”রি কওমের শক্তি পরীক্ষা করিও না। আর আমাদেরকে অবিশ্বাসী (জালিমদের) কবল থেকে অনুগ্রহ করে মুক্তি দাও।

– মা-বাবার অবাধ্য হওয়া।

সন্তানের জন্য দুনিয়াতে জান্নাত এবং জাহান্নাম হচ্ছেন মা ও বাবা। যে ব্যক্তি মা-বাবার হক আদায় করতে পারবে সে দুনিয়াতেই পাবে জান্নাতের সুঘ্রান। আর যে ব্যক্তি মা বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে, দুনিয়ায়ই তার জন্য জাহান্নাম। মৃ”ত্যু”র আগে অবশ্যই সে ব্যক্তি মা বাবার অবাধ্যতার শাস্তি ভোগ করবে।

কুরআনুল কারিমের মা বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে হুকুম দিয়েছেন। মা বাবার দায়িত্ব পালনকালে কীভাবে কথা বলবেন সে ব্যাপারেও দিয়েছেন দিক-নির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তিনি (আল্লাহ) ছাড়া কারো উপাসনা করো না এবং বাবা-মার প্রতি উত্তম আচরণ করো।

তাদের একজন কিংবা উভয় যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উফ্ বলো না এবং তাদের ভর্ৎসনা করো না বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক নম্র ভাষায় কথা বলো। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাকো। আর (তাদের জন্য দোয়া করে) বল-

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণ : ‘রাব্বিরহামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩-২৪)

হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি তার বাবা-মাকে পেল কিন্তু তাদের সন্তুষ্ট করতে পারল না, তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত।’পৃথিবীতে বাবা এবং মা সন্তানের জন্য জান্নাত এবং জাহান্নাম। যারা বাবা-মাকে সন্তুষ্ট করতে পারল তাদের জন্য দুনিয়াই জান্নাত। আর যারা বাবা-মার সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ দুনিয়াই তাদের জাহান্নাম।

বাবা-মার মর্যাদা আল্লাহর কাছে কত বড় তার প্রমাণে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম একটি বড় হাসি পেশ করেছেন। বাবা মার খেদমতে ব্যাপারে এ হাদিসটিই যথেষ্ট। আর তাহলো-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ‘একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মসজিদে নববির) মিম্বরের প্রথম ধাপে ওঠে বললেন, ‘আমিন’; দ্বিতীয় ধাপে ওঠে বললেন, ‘আমিন’; তৃতীয় ধাপে ওঠেও বললেন, ‘আমিন।’সাহাবায়ে কেরাম বিশ্বনবির (৩বার) ‘আমিন’ বলার কারণ জানতে চাইলেন-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ মাত্র জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে জানালেন যে ব্যক্তি রমজান পেলে কিন্তু তার গোনাহ মাফ করাতে পারল না, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক; আমি বললাম আমিন।’

তারপর জিবরিল আলাইহিস সালাম বলল, ওই ব্যক্তি ধ্বং”স হোক, যার সামনে আমার নাম (মুহাম্মাদ) উচ্চারণ করা হলো কিন্তু সে দরূদ পড়ল না; তখন আমি বললাম আমিন।

অতপর জিবরিল আলাইহিস সালাম বলল, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বং”স হোক, যে বাবা-মা উভয়কে পেল অথবা একজনকে পেল কিন্তু তারা তাদের (খেদমত করে) জান্নাত অর্জন করতে পারলো না। আমি বললাম আমিন।’

হাদিসটির ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বললেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতা দুর্বল হয়ে পড়ে; রোগে-শোকে অসহায় হয়ে পড়ে, সে অবস্থায় যে সন্তান বাবা-মা’র খেদমত তথা সেবা-যত্ন না করে তাদের জন্য এ ধ্বংস। যে ব্যাপারে বিশ্বনবি আমিন বলেছেন।

অথচ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন উম্মতের জন্য দয়া ও মমতার উজ্জ্বল প্রতীক। সব সময় উম্মতের জন্য আল্লাহর কাছে কল্যাণের দোয়া করতেন। অথচ পিতা-মাতার অবমূল্যয়ন করায় বিশ্বনবির তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে আমিন বলেছেন।(নাউজুবিল্লাহ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত দুটি অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার এবং অপরাধ দুটি না করার তাওফিক দান করুন। জু”লু”ম থেকে বাঁচার এবং পিতার খেদমত করার তাওফিক দান করুন। বাবা মা জীবিত না থাকলে তাদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।