সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইন্সটাগ্রামের কিছু স্ট্যাটাস অনেক সময় মানুষের অবচেতন মনকে জাগিয়ে তোলে। বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে আসে। অসহায় মানুষের কষ্ট হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে শেখায়। এমনকি নিজ বাবা-মা, পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের প্রতি অবহেলাকারীও হয়ে ওঠে সতর্ক।
এমনই একটি স্ট্যাটার্স তুলে ধরা হলো, যা সন্তানকে তার বাবা-মার সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে শেখাবে-
এক বৃদ্ধ বাবা ও তার ছেলেকে নিয়ে উঠের পিঠে চড়ে এক কাফেলার সঙ্গে হজ পালনের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। হঠাৎ পথিমধ্যে বাবা তার ছেলেকে বললেন, বাবা! তুমি কাফেলার সঙ্গে চলতে থাক, আমি আমার প্রয়োজন সেরে তোমাদের সঙ্গে যোগ দেব। আমাকে নিয়ে ভয় পেয়ো না।
এ কথা বলে ছেলেকে উটের উপর রেখে বাবা নেমে পড়লেন। ছেলে উটের পিঠে চড়ে কাফেলার সঙ্গে চলতে থাকলো। কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা হয়ে গেলো। কাফেলা পথচলা বন্ধ করে তাঁবু স্থাপন করল। ছেলে তার বাবাকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কাফেলা কোথাও ছেলে তাঁর বাবাকে খুঁজে পেলো না্।
এবার ছেলে উট ও কাফেলা ফেলে ভয়ে ভয়ে উল্টো পথে বাবার সন্ধানে পেছনের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
অনেক দূর যাওয়ার পর ছেলে দেখলো তার বৃদ্ধ বাবা অন্ধকারে পথ হারিয়ে একা একা বসে আছে। ছেলে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। পরম মমতা ও আদরে বাবাকে নিজ কাঁধে উঠিয়ে নিলো। তারপর কাফেলার দিকে চলতে শুরু করলো।
তখন বাবা তার ছেলেকে বলল, বাবা! আমাকে নামিয়ে দাও, আমি হেঁটেই যেতে পারবো।
ছেলে বললো, ‘বাবা তোমাকে কাঁধে নিয়ে চলতে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তোমাকে কাঁধে নিয়ে পথচলা এবং আল্লাহর জিম্মাদারি আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে বেশি উত্তম।
ছেলের মুখে এমন কথা শুনে বাবা কেঁদে ফেললেন। তাঁর চোখ থেকে আনন্দ অশ্রু ঝরছে। বাবার চোখের পানি ছেলের মুখের ওপর গড়িয়ে পড়ছে।
ছেলে তার বাবাকে বললো, বাবা! কাঁদছ কেন? তোমাকে নিয়ে চলতে তো আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না।
বাবা তার ছেলেকে বলল, তোমার কষ্ট হচ্ছে এ কথা ভেবে আমি কাঁদছি না। বরং আমার কাঁন্নার কারণ হলো- ‘আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগের কথা। আমি যখন তোমার মতো ছোট, তখন এ রাস্তা দিয়েই আমি ও আমার বাবা হজে গিয়েছিলাম। আমি আমার বাবাকে এভাবে কাঁধে চড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম।
তখন আমার বাবা ও আমার মধ্যে এ রকম কথা-বার্তাই হয়েছিল। আর বাবা আমার জন্য এই বলে দোয়া করেছিলেন যে- ‘তোমার সন্তানও তোমাকে ভালোবেসে এভাবে কাঁধে চড়িয়ে নিয়ে যাবে।’
আজ বাবার দোয়ার বাস্তবরূপ দেখতে পেয়েই কাঁদছি বাবা! আমার জন্য বাবার দোয়া কবুল হয়েছে। শুকরিয়া ও প্রশংসা সে মহান প্রভুর, যিনি আমার জন্য আমার বাবার দোয়া কবুল করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ স্ট্যাটাস আমাদের এ শিক্ষাই দেয় যে-
যে ছেলে-মেয়ে তার বাবা-মাকে ভালোবাসবে, খেদমত করবে, তাঁদের জন্য দোয়া করবে। সে ছেলে-মেয়েও একদিন বাবা-মা হবে। তার সন্তানও তাঁকে ভালোবাসবে, সেবা করবে এবং দোয়া করবে।
সুতরাং বৃদ্ধ বয়সে নিজের সুখ শান্তির জন্য হলেও প্রত্যেক সন্তানের উচিত, বাবা-মাকে ভালোবাসা। বাবা-মার সেবা করা। বাবা-মার জন্য দোয়া করা।
সর্বোপরি বাবা-মার জন্য আল্লাহর শেখানো ভাষায় দোয়া করা-
উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছাগিরা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার বাবা-মার প্রতি দয়া করুন। যেভাবে বাবা-মা আমার ছোট বেলায় আমার প্রতি দয়া করেছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে তাদের বাবার মার জন্য দোয়া করার তাওফিক দান করুন। তাদের সেবা করার তাওফিক দান করুন। তাদেরকে ভালোবাসার তাওফিক দান করুন। আমিন।