স্মৃতিশক্তি বাড়ায় যে ৮ টি খাবার

3166

স্মৃতিশক্তি বাড়ায় যে ৮ টি খাবার- বিষয়টা বেশ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। উভয় অবস্থাতেই স্মৃতি শক্তি বা স্মরণ শক্তি বাড়ানোর চিকিৎসা রয়েছে হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা বিজ্ঞানে। স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় ব্রেইন টনিক আমরা খেয়ে থাকি। কিন্তু তাতে কি স্মৃতিশক্তি বাড়ে?

গবেষকরা বলেছেন, শাক-সবজি, ফল-মূল, কিছু সামুদ্রিক মাছ এই স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেই স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এমন ৮ টি কার্যকরী খাবার সম্পর্কে-

১. শাক-সবজি-

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে ভিটামিন যুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, যেমন , তাজা ফলমূল, গাঢ় সবুজ শাকসবজি। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন সবুজ শাক-সবজি। এদের মাঝে থাকা প্রোটেক্টিভ এন্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্ককে করে তোলে আরো অধিক কার্যক্ষম। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই শাক-সবজি রাখুন।

২. কফি-

গবেষণায় পাওয়া গেছে, যারা দিনে ৩ থেকে ৫ কাপ কফি পান করেন তাঁদের স্মৃতি ভ্রংশের রোগ অনেকটাই কম হয়। এদের তুলনায় যারা দিনে ২ কাপ কফি পান করেন তাদের ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি। ধারণা করা হয়, কফিতে থাকা ক্যাফেইন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট ব্রেইনের কোষগুলোকে সুরক্ষিত করে থাকে।

৩. জাম ও স্ট্রবেরি জাতীয় ফল-

কালো জাম ব্রেইনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর খাবার বলে ধরা হয়, কেননা তা আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করে ও শেখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। বয়স যত বাড়বে বিভিন্ন জিনিস মনে রাখার ক্ষমতাও আপনার তত কমতে থাকবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে জাম, লিচু, স্ট্রবেরি, কালোজাম বা আঙ্গুরের মত কিছু ফল।

এসব ফলে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট যা ব্রেইনের কোষের অক্সিডেশন এবং ক্রমাগত ক্ষয়ে যাওয়া রোধ করে ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

৪. সামুদ্রিক মাছ-

মস্তিষ্কে থাকা ফ্যাটি এসিডের ৪০% ডি,এইচ,এ, যা সামুদ্রিক মাছের তেলে পাওয়া যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হিসেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ব্রেইনের বিভিন্ন কোষের মধ্যে সিগনাল আদান-প্রদান বাড়িয়ে দিতে পারে। সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৫. চকোলেট-

আমরা মনে করি চকোলেট আমাদের ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল। ডার্ক চকোলেট দক্ষতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যাতে অন্তত ৭০% কোকো থাকে, মস্তিষ্কের এতে ফ্ল্যাভোনয়েড নামে এক ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ব্রেইনের কোষকে রাখে কর্মক্ষম ও সজীব।

৬. নানা রকমের বাদাম-

সহজলভ্য খাবার বাদাম, যাতে আছে ভিটামিন ই, যা হচ্ছে আরো একটি এন্টি-অক্সিডেন্ট। খুব সহজেই পাওয়া যায়। এই বাদামকে প্রতিদিন রাখুন আপনার খাদ্য তালিকার মধ্যে।

৭. ঘোল বা মাঠা-

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মাঠা মস্তিষ্কের সংকোচন কমিয়ে দেয়। একমাত্র পেট খারাপ হলে আমরা মাঠা খাই অনেক সময়। তাছাড়া এই ঘোলকে আমরা খুব একটা পাত্তা দিতে চাইনা। কিন্তু এই ঘোল কতটা উপকারি তা যদি আমরা জানতাম- তাহলে অবহেলা করতাম না। দুধ থেকে তৈরি ঘোলে থাকে ভিটামিন বি-১২ এবং এই ভিটামিনের অভাবে স্মৃতিশক্তি ভয়াবহভাবে হ্রাস পায়। ঘোলে থাকা ভিটামিন বি-১২ বয়সজনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস রোধ করে থাকে।

৮. গমের রুটি-

গমের আটা স্বাস্থ্যসম্মত ও খুবই পুষ্টিকর। গমের আটা এবং সাদা ময়দাতে, সাদা ভাত বা বাদামি ভাতেও প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা মস্তিষ্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে ভিটামিন যুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তাজা ফলমূল, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, গমের রুটি প্রভৃতি প্রোটিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। পরিমান মতো বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

প্রচুর চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। বিশেষ করে বাসি-দূষিত খাবার খাবেন না। ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকুন। এগুলো মস্তিষ্কের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর।

কাঁঠালের গুণাগুণ যে সব রোগের ঝুঁকি কমায়

কাঁঠাল এমন একটি ফল যার সবকিছুই কোনো না কোনো কাজে লাগে। কাঁচা বা পাকা দুইভাবেই খাওয়া যায়। আর রীতিমতো পুষ্টি উপাদানের খনি। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ, আয়রন, থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম। এই সব গুণাগুণ অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়।

হজমের সমস্যায় কাঁঠাল খুবই উপকারী। এর উপাদান পাকস্থলীর আলসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকরী।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁঠালে থাকা ভিটামিন সি শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তের শ্বেতকণিকার কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।

কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট অ্যাটাক আর স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। হাঁপানির সমস্যায় অব্যর্থ ওষুধ কাঁঠাল। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বলা হয়, যদি কাঁঠালের শিকড় পানিতে ফুটিয়ে তরলটুকু খাওয়া যায় তবে হাঁপানির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

কাঁঠালে থাকা খনিজ উপাদান (বিশেষ করে তামা) থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ ও শরীরের সর্বত্র রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে কাঁঠাল।

কাঁঠালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলনের বিষাক্ত অংশ (টক্সিক উপাদান) পরিষ্কার করে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। তা ছাড়া এই ফলে থাকা উচ্চমাত্রার আঁশ জাতীয় উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে পাইলসের ঝুঁকি কমায়।

গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোনিউট্রিঅ্যান্ট পদার্থ আছে কাঁঠালে। যার পর্যাপ্ত উপস্থিতি স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে। ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবেও কাজ করে।