মধ্যবিত্তদের দেখার কেউ নেই, না পারছে সাহায্য চাইতে না পারছে সহ্য করতে

2914

চরম অসুবিধায় মধ্যবিত্তরা – ক’রো’না ভাই’রাসের প্রভাব ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশ লকডাউন করা হয়েছে, থেমে গেছে জনজীবনের সকল কার্যক্রম। বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও তৈরি হয়েছে অঘোষিত লকডাউন পরিস্থিতি।

ভাই’রাসের বিস্তার রোধে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও পরে আবার তা বাড়ানো হয়েছে। ফলে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শপিংমলসহ সকল ধরনের যানবাহন। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট ও পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারছে।

একদিকে উচ্চবিত্তরা বিলাসিতায় ছুটি কাটাচ্ছেন অপরদিকে নিম্মবিত্ত পরিবারের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে চরম অসুবিধায় থাকলেও কাউকে কিছু বলতে পারছেন না মধ্যবিত্তরা। লোক লজ্জার ভয়ে তারা চাপা কান্না কাঁদছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, খুলনায় একটি গাড়ির শো-রুমে চাকরি করেন তিনি। এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। বেতনও ভালোই পাচ্ছিলেন কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে শো-রুম বন্ধ পাশাপাশি বেতনও বন্ধ। এই অবস্থায় চিন্তায় তার মাথায় হাত। কী করবেন, কী করা উচিত, ভেবে উঠতে পারছেন না। সংসার চালাতে যু’দ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষু লজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশও করতে পারছেন না।

খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরে একটি দোকানের ম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি। আর্থিকভাবে পরিবার নিয়ে ভালোই ছিলেন তিনি। মা-বাবা, দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ভাড়া বাসায়। মাসিক যে বেতন পেতেন তাতেই সংসারটা ভালোভাবে চলে যেত। কিন্তু তার কোনো সঞ্চয় নেই।

গত কয়েক বছর ব্যবসা করলেও এমন সংকটে কখনোই পড়েননি তিনি। ১০ দিন ধরে দোকান বন্ধ। হাতে কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে কিছু বাজার করেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠিন অনিশ্চয়তায় পড়ে অন্ধকার দেখছেন চোখেমুখে।

বাসা ভাড়া, সংসার খরচ এসব কিভাবে জুটবে সেই চিন্তায় ঘুম আসে না তার। স্ত্রী ও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে বিলাপ করা ছাড়া আর পথ দেখছেন না তিনি।

খুলনা নিউমার্কেটের একজন কসমেটিকস ব্যবসায়ী বলেন, উচ্চবিত্তদের তো আর্থিক সমস্য না হওয়ায় স্বাচ্ছন্দে জীবনজাপন করছেন। নিম্নবিত্তের লোকজন তো সরকারি ত্রাণ পাচ্ছে, বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু মধ্যবিত্তের কী হবে? তার ঘরে খাবার শেষ হয়ে আসছে। তারা এখন অল্প অল্প করে খাচ্ছেন।

মধ্যবিত্তদের দুর্দশার কথা কেউ কেউ ফেসবুকেও তুলে ধরছেন। একজন লিখেছেন, ‘সবাই আমরা ব্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষদের নিয়ে। মধ্যবিত্তদের খবর কেউ নেয় না।

এসময় মধ্যবিত্তদের খবর না রাখলে না খেয়ে মারা যেতে পারে হাজারও মধ্যবিত্ত। খবর নিয়েন বাসায় বাজার সদায় আছে নাকি। মুখ চেপে না খেয়ে দিন পার করছে মধ্যবিত্তরা।

এদিকে গত শুক্রবার এবং শনিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে পায়ে হেঁটেই ঢাকামুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে। অন্য দিকে, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও ঢাকামুখী মানুষের ভিড় লেগে ছিল।

গাদাগাদি করে ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়া এসব মানুষ করোনা’ভা’ইরাস সং’ক্র’মণ থেকে কতোটা মুক্ত তা নিশ্চিত না হয়ে এভাবে তাদের কে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়া কতোটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

এ পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকা ফেরা মানুষগুলোকে আবার বাড়ি ফেরা পথ ধরতে হয়।

রাস্তায় গাড়ি না থাকায় তাদের অবলম্বন হয় মাছ বহনকারী গারিগুলোতে। তারা মাছের কন্টেইনারের ভেতরে বসে বাড়ির পথ ধরে। এ নিয়েও সরব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। আজ ফেসবুকে ভা’ইরাল হয় এই মানুষদের বাড়ি ফেরার একটি ছবি। যেখানে তাদের দেখা যায় ছোট ছোট লরিতে রাখা মাছের কন্টেইনারে করে তারা বাড়ি ফিরছে।