সৌন্দর্যের রানী ক্লিওপেট্রার করুণ পরিণতি

2271

ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সুন্দরী নারীদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন মিশরের রানী ক্লিওপেট্রা।

শারীরিক সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই নারীকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে আজও কৌতূহলের কোনো কমতি নেই।

অসম্ভব কৌশল এবং যথেষ্ট রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন হওয়ার পরও করুণ পরিণতির সম্মুখীন হন সৌন্দর্যের দেবী বলে আখ্যায়িত  এই নারী। তার জীবনের থেকে মৃত্যু অনেক বেশি রহস্যময়।

আজ থেকে দুই হাজার বছর আগের সেই মৃত্যু এখনো ভেবে চলছে গবেষকদের। কারণ তার মৃত্যু নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ যথেষ্ট নয়।

ক্লিওপেট্রার ৩৯ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবন ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। ছোট জীবনে কখনো তিনি ছিলেন রাজকন্যা, কখনো বা পরাক্রমশালী রানী আবার কখনো বা তিনি ছিলেন প্রেয়সী।

মিশরীয় রানীদের মধ্যে তিনি ক্লিওপেট্রার সপ্তম হিসেবে পরিচিত। বাবার সঙ্গে তিনি দ্বৈত ভাবে মিশর শাসন করতেন। টলেমিদের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন ক্লিওপেট্রা।  

তার বিলাসবহুল এবং রাজকীয় জীবনযাপনে রাজকোষের বড় একটা অংশ ব্যয় হতো। তিনি মিশরীয় বা ফারাওদের মতো বেশভূষা এবং ভাষা আয়ত্ত করে নিজেকে মিশরীয় সূর্য দেবতার অন্য রূপে আত্মপ্রকাশ করেন।

স্বর্ণ মুকুট পরিধান করতেন এই নারী। ক্লিওপেট্রা একজন গণিতজ্ঞ এবং ভালো ব্যবসায়ী ছিলেন। সাহিত্য এবং দর্শনের তার প্রবল অনুরাগ ছিল। মিশরীয় সহ মোট নয়টি ভাষা জানতেন ক্লিওপেট্রা। 

বাবা মারা যাওয়ার পর মাত্র ১৮ বছর বয়সে মিশরের সম্রাজ্ঞী হন তিনি। তৎকালীন মিশরীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি আপন ভাইকে বিয়ে করেছিলেন।

ভাতৃদ্বয় ত্রয়োদশ টলেমি ও চতুর্দশ টলেমি সঙ্গে রাজ্য শাসন করতেন তিনি। তবে সিংহাসনে বসার মাসখানেক পরে তাদের মধ্যকার সম্পর্কের ফাটল ধরে। কারণ ক্লিওপেট্রার ইচ্ছে ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী নারী এবং ধনকুবের হওয়ার। 

সে উদ্দেশ্যে সরকারি দলিলপত্র থেকে নিজের ভাইয়ের নাম মুছে ফেলেন তিনি। এমনকি মুদ্রা এবং নাম সংযোজন করেন। কিন্তু তার উদ্দেশ্য সফল হলো না।

কিছুদিনের মধ্যেই টলেমি ষড়যন্ত্র করে ঠিক ক্লিওপেট্রাকে মিশন থেকে বিতাড়িত করে একাই রাজ্য শাসন করতেন থাকেন। ক্লিওপেট্রা তখন তৎকালীন সিরিয়ায় পালিয়েযান জীবন রক্ষার্থে। 

সিংহাসন ফিরে পেতে তখন নিজের রূপকে কাজে লাগান। অপূর্ব এই সুন্দরী ক্ষমতা ফিরে পেতে কিংবদন্তি মহানায়ক জুলিয়াস সিজারের সঙ্গে দেখা করেন।

তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পড়েন সিজার এবং ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের সাহায্য করেন। ক্লিওপেট্রা আর সিজারের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি জুলিয়াস সিজারের নাম অনুসারে ক্লিওপেট্রা তার বড় ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘সিজারিওন’। 

প্রাণবন্ত এই রাজকুমারী মিশরীয়সহ মোট নয়টি ভাষা জানতেন। গণিতবিদ ও ব্যবসায়ী হিসেবেও তার সুনাম ছিল। রাজনৈতিক কারণে তিনি নিজেকে সূর্যদেবতার বংশধর হিসেবে প্রচার করতেন এবং দেবী আইসিসের শিরোস্ত্রাণ পরতেন। 

সাহিত্য ও দর্শনে তার প্রবল অনুরাগ ছিল। তার চূড়ান্ত অভিলাষ ছিল রোমের আওতার বাইরে থেকে প্রথম টলেমি প্রতিষ্ঠিত পুরো এলাকার রাজমতা লাভ করা। ক্লিওপেট্রা সব সরকারি দলিলপত্র থেকে তার ভাইদের নাম মুছে ফেলেছিলেন। এমনকি মুদ্রায় তার একক পোর্ট্রেট ও নাম সংযোজন করেন। 

রোমে সিজার ক্লিওপেট্রাকে অত্যন্ত সম্মানিত আসন দান করেন। এমনকি ভেনাসের মন্দিরে ক্লিওপেট্রার একটি স্বর্ণমূর্তিও স্থাপন করা হয়। সিজারের আকস্মিক মৃত্যুর পর মার্ক অ্যান্টনি অল্প বয়স্ক অক্টাভিয়াসকে বেকায়দায় রেখে রোমের শাসনভার গ্রহণ করেন।

বুদ্ধিমতী ক্লিওপেট্রা এবার এবার মার্ক অ্যান্টনিকে নিজের কবজায় আনার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন। ২৮ বছরের সুন্দরী ক্লিওপেট্রার মোহনীয় সৌন্দর্য ও বুদ্ধিমত্তার কাছে ধরা দেন সম্রাট মার্ক অ্যান্টনি। 

ক্লিওপেট্রার মোহে বন্দি রোমান সম্রাট অ্যান্টনি ঘোষণা করেন, মিশর রোমের করদরাজ্য নয়, বরং মিশর একটি স্বাধীন দেশ। আর ক্লিওপেট্রা এ দেশের রানি। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৬ সালে তারা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। এটি ছিল একটি চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ঘটনা। ক্লিওপেট্রাকে খুশি করতে ৩৪ সালে তিনি মিশর, সাইপ্রাস, ক্রিট, সিরিয়ার শাসনমতা ক্লিওপেট্রাকে দান করেন।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩১ সালে অ্যান্টনি গ্রিসে তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী অক্টাভিয়াসের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে যান। ফলে রোমের শাসন ক্ষমতা চলে যায় অক্টাভিয়াসের কাছে। সেই সঙ্গে ক্লিওপেট্রার কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়লেন অ্যান্টনি।

অক্টাভিয়াসের ক্লিওপেট্রা তার মায়াজালে বন্দি করতে যেয়ে অ্যান্টনিকে সুকৌশলে মৃত্যুর দিকে থেলে দেন। অ্যান্টনি মৃত্যুবরণ করলেও অক্টাভিয়াসকে হাত করার অপপ্রয়াস পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। অক্টাভিয়াস ক্লিওপেট্রাকে জীবিত চায়। অক্টাভিয়াস কাছে আরো অপমানিত হবার চেয়ে মৃত্যুই তার কাছে শ্রেয় মনে হলো। 

তাই তদানীন্তন রাজকীয় প্রথা হিসেবে অ্যাস্প নামের এক বিশেষ ধরনের সাপের ছোবলে ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যা করেন। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মিশরে প্রায় ৩০০ বছরের মেসিডোনিয়ান শাসনের অবসান ঘটে। অতি স্বল্প আয়ুর এই বিখ্যাত রানির শাসনকালে অতি সংক্ষিপ্ত হলেও তার জৌলুসপূর্ণ শাসনামলের কথা পৃথিবী যুগে যুগে স্মরণ করবে।