তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা জাতীয় নেতাদের অন্যতম তাজউদ্দীন আহমদ। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন সর্বপ্রথম কুরআনে হাফেজ প্রধানমন্ত্রী।
তাজউদ্দীন আহমদের জন্ম ২৩ জুলাই ১৯২৫ সালে। ঢাকা থেকে সড়কপথে ৮২ কিলোমিটার দূরবর্তী কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা মৌলভি মুহাম্মদ ইয়াসিন খান ও মা মেহেরুন্নেসা খানম। তাঁরা ছিলেন চার ভাই ও ছয় বোন।
ধার্মিক মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় তাঁর বাবার কাছে আরবি শিক্ষার মাধ্যমে। একই সময় তিনি ভর্তি হন বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী ভুলেশ্বর প্রাইমারি স্কুলে।
চতুর্থ শ্রেণীতে উঠে তিনি ভর্তি হন দরদরিয়া থেকে পাঁচ মাইল দূরের কাপাসিয়া মাইনর ইংরেজি (এমই) স্কুলে। এই স্কুলে থাকার সময় তিনি তিনজন প্রবীণ বিপ্লবী নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তাঁরা ওই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে তাজউদ্দীন আহমদকে আরও ভালো স্কুলে পাঠানোর সুপারিশ করেন। সেই সুবাদে তাকে কালীগঞ্জের সেন্ট নিকোলাস ইনস্টিটিউশনে ভর্তি করা হয়। এখানেও তার মেধা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পরামর্শে তিনি ভর্তি হন ঢাকার মুসলিম বয়েজ হাইস্কুলে। তারপর সেন্ট গ্রেগরীজ হাইস্কুলে।
স্কুলে তাজউদ্দীন আহমদ বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ষষ্ঠ শ্রেণীর এমই স্কুলারশিপ পরীক্ষায় তিনি ঢাকা জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে দ্বাদশ স্থানের অধিকারী হন। ১৯৪৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে চতুর্থ স্থান লাভ করেন।
তাজউদ্দীন আহমদ পবিত্র কোরআনে হাফেজ ছিলেন, যা তিনি নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার সান্নিধ্যে আয়ত্ত করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে বি এল ডিগ্রি লাভ করে বর্ধমান আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে এপ্রিলের ২৬ তারিখে তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সৈয়দা জোহরা খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নি’র্ম’মভাবে নি’হ’ত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই দিন সকালে তাজউদ্দীন আহমদকে গৃহ’ব’ন্দি করা হয় এবং পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ব’ন্দি অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৩ সভেম্বর কা’রা’গারে হ’ত্যা করা হয় তাজউদ্দীন আহমদ, এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।