প্রবাসী স্বামীকে ভিডিও কলে দেখিয়ে প্রেমিককে নিয়ে ঘরে ঢুকেন স্ত্রী

1502

স্ত্রীর প’রকীয়ার জেরে সৌদি প্রবাসী আব্দুর রহমান গাজীর (৪৬) জীবন বি’ষিয়ে উঠেছিল। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই প’রকীয়া প্রেম শুরু করেছিল স্ত্রী মুর্শিদা সুলতানা। প’রকীয়ার দৃশ্য ভিডিও কলের মাধ্যমে সরাসরি দেখাতো স্বামীকে।

বিদেশের মাটিতে স্ত্রীর প’রকীয়াসহ নানা অ’পকর্মের খবরে মর’ণ যন্ত্রণায় দিন কা’টাচ্ছিল আব্দুর রহমান। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় সৌদি আরবের কনফুদা এলাকায় গলায় ফাঁ’স দিয়ে আ’ত্মহ’ত্যা করেন। আ’ত্মহ’ত্যার খবরটি সাথে সাথে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

পারিবার ও এলাকা সূত্রে জানা যায়, প’রকীয়ার বলি আব্দুর রহমান গাজীর বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজে’লার আন্দুলিয়া গ্রামে। পেশায় ছিল একজন রাজমিস্ত্রি। তবে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করতেন।

১০ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেন তিনি। ২ পুত্র সন্তান জন্মের পর আব্দুর রহমান গাজী প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। প্রথম স্ত্রীর মা’মলায় আব্দুর রহমান কারা’ভোগ করেছেন।

পরবর্তীতে প্রেমের সূত্র ধরে আব্দুর রহমান খুলনার বটিয়াঘাটা উপজে’লার গাওঘরা গ্রামের হেকমত আলী বিশ্বা’সের একাধিক স্বামী পরিত্য’ক্তা মেয়ে মুর্শিদা সুলতানাকে (৩০) বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে মিম নামে তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। মিমের বর্তমান বয়স ৫ বছর। সন্তান জন্মের পর কিছুদিন তাদের দাম্পত্য জীবন সুখেই ছিল।

আব্দুর রহমান গাজী লেখাপড়া না জানলেও দ্বিতীয় স্ত্রী মুর্শিদা সুলতানাকে লেখাপড়া করিয়ে এমএ পাশ করান। বিয়ের পর মুর্শিদা সাতক্ষীরায় ব্র্যাকে (এনজিও) চাকুরি করতেন।

আব্দুর রহমান গাজীও বাসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করতেন। কিন্তু সেখানে ব্র্যাকের এক কর্মকর্তার নজরে পড়েন মুর্শিদা। নিরুপায় হয়ে চাকুরি ছেড়ে আব্দুর রহমান তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন। বাড়ি এসে আবারো পুরোনো পেশা রাজমিস্ত্রি কাজ শুরু করেন তিনি।

আব্দুর রহমান গাজী বসবাসের ভিটেটুকু ছাড়া সকল জমিজমা সম্পদ বিক্রি করে সর্বশান্ত হন। ধারদেনা করে বড় ছেলে সাগরকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেন। ছোট ছেলে আকাশ তার মায়ের সাথে মামা’র বাড়ি অবস্থান করে পড়ালেখা করে।

শেষ সম্বল বাড়িটাও অবশেষে স্ত্রীর চাপে ৭ শতক জমিসহ মুর্শিদার নামে লিখে দেয়। হাতের পাঁচ হারিয়ে রহমান গাজী হয়ে পড়ে অসহায়। স্ত্রী মুর্শিদা বিদেশ যাব’ার জন্য আব্দুর রহমানকে আবারো চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

আব্দুর রহমান স্ত্রীর কথামত বিভিন্ন এনজিও, সমিতি ও ব্যক্তির নিকট থেকে ঋণ নিয়ে ৩ মাস আগে সৌদি আরবে চলে যান। ১৫ লক্ষাধিক টাকার মত ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েন আব্দুর রহমান গাজী।

নিঃস’ঙ্গ জীবনকে আয়েশী করতে মুর্শিদা আন্দুলিয়া গ্রামের আঃ রহমান বিশ্বা’স ওরফে কুদার ছেলে শাহ বিএম কিবরিয়ার সাথে প’রকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। বিএম কিবরিয়া শাহপুর বাজারের পশ্চিম মাথায় রয়েছে টিনের ব্যবসা। অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর মতই ছিল কিবরিয়া ও মুর্শীদার মেলামেশা। কিবরিয়ার অবাধে যাতায়াত চলে মুর্শিদার ঘরে।

পাশের বাড়ির ইজিবাইক চালক মোঃ রাশেদ আকুঞ্জী জানায়, কিবরিয়া বিভিন্ন সময়ে খাবারসহ জিনিসপত্র নিয়ে প্রায়ই মুর্শিদার ঘরে প্রবেশ করতো। যা সবার নজরে ছিল।

আব্দুর রহমান গাজীর সৎ মা রহিমা বেগম (৬৭) জানায়, বৃহস্পতিবার আ’ত্মহ’ত্যার আগে রহমান তার স্ত্রীর কাছে ফোন দেয়। কিন্তু তার স্ত্রী ফোন রিসিভ না করায় আমাকে ফোনে বি’ষয়টা জানায়। পরে আমি মুর্শিদাকে ডেকে দিলে উত্তরে সে বলে আমা’র ফোন চার্জে আছে।

পরে আমা’র কথামত মুর্শিদা আব্দুর রহমানের ফোন রিসিভ করে এবং আমাকে সরে যেতে বলে। পরে পাশে থাকা লোক মা’রফত জানতে পারি আব্দুর রহমান তার স্ত্রীকে কিবরিয়ার পথ থেকে সরে আসতে অনুরোধ করে। কিন্তু মুর্শিদা তার স্বামীর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে জানায়, আমি কিবরিয়াকে প্রয়োজনে বিয়ে করবো। তোমা’র মত স্বামী আমা’র কোন প্রয়োজন নেই।

কল কে’টে দিয়ে কিছুক্ষণ পর মুর্শিদা তার স্বামীর ফোনে কয়েকবার রিং দিলে তা আর রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে সৌদি প্রবাসি ওলিয়ারের স্ত্রীর মাধ্যমে ওলিয়ারের ফোনে মুর্শিদা রিং করিয়ে তার স্বামীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। তখন তাদের কর্মস্থল থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে মর’ুভূমির মধ্যে একটি ঘরে আব্দুর রহমানের ঝুলান্ত লা’শ দেখতে পায়।

আব্দুর রহমান গাজী বৃহস্পতিবার আ’ত্মহ’ত্যার দিন সকালে স্বজনদের অনেকের সাথে মোবাইলে তার পারিবারিক কষ্টের কথা জানায়। এমনকি সৌদি আরবে সহকর্মীদেরও পারিবারিক কষ্ট আর যন্ত্রণায় আ’ত্মহ’ত্যা করবে বলেও জানায়।

আব্দুর রহমানের সৎ মা রহিমা বেগম আরো জানায়, আ’ত্মহ’ত্যার আগের দিন রাত সাড়ে ১১টায় আমাকে ফোন দিয়ে রহমান মুর্শিদার ঘরে যেতে বলে। আব্দুর রহমান আমাকে বলেছিল ঘরে লোক ঢুকেছে, আমাকে সে ভিডিও কলের মাধ্যমে লোকটাকে দেখিয়েছে। তখন আমি বউমাকে ডাকলে দরজা না খোলায় আমি ফিরে আসি।

আ’ত্মহ’ত্যার আগে মুর্শিদার প’রকীয়া বি’ষয় নিয়ে আব্দুর রহমান তার বোন সালমা, ভা’গ্নি সোনিয়া পপিসহ অনেকের সাথে কথা বলেন। ভাষ্যমতে আব্দুর রহমান অতি কষ্টে তাদের জানায়; আমা’র সুখ নেই। সবই আমা’র কপাল। আমি মুর্শিদাকে ফেসবুক আইডি বন্ধ করতে বলেছি কিন্তু সে বলেছে এটা সম্ভব না। সে নাকি কিবরিয়াকে বিয়ে করেছে। এ সমস্ত কথা আমাকে বলছে।

কর্মস্থলে সহকর্মীরা আব্দুর রহমানের অবস্থান না থাকায় তাকে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে মর’ুভূমির মাঝে একটি ঘরে ঝুলান্ত অবস্থায় আব্দুর রহমানের লা’শ উ’দ্ধার করেন প্রবাসী চাচাতো ভাই এম’দাদুল হক ও ওলিয়ার রহমান।

লা’শ স্থানান্তর করার অ’পরাধে তাদের ২ জনকে আট’ক করে সৌদি পু’লিশ। লা’শ নামানোর সময় তারা আব্দুর রহমানের মোবাইল সেটটি আ’ত্মহ’ত্যা করা ঘরের চালে স্থাপন করা ছিল। ধারণামতে আ’ত্মহ’ত্যার দৃশ্য তার স্ত্রীকে প্রদর্শন করছিল।

এদিকে আব্দুর রহমানের লা’শ ফেরত আনার ব্যাপারে তার বড় ছেলে ও চাচাতো ভাইয়েরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে পারিবারিক সূত্র জানায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আব্দুর রহমানের আ’ত্মহ’ত্যার নেপথ্য কাহিনী উদঘাটন ও ৩ সন্তানের ভবি’ষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আন্দুলিয়া গ্রামের ঐ বাড়িতে শোকা’হত পরিবেশে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এক আলোচনায় বসেন।

বৈঠকে মুর্শিদা সুলতানা তার প’রকীয়া প্রেমের উপাখ্যান অকপটে স্বীকার করেন এবং আব্দুর রহমানের ৩ সন্তানের ভবি’ষ্যতের জন্য নিজের নামের বসবাসের ভিটে তাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার ঘোষণা দেয় এবং মুর্শিদা শেষমেশ তার প’রকীয়া প্রেমিক কিবরিয়ার ঘরে উঠিয়ে দেয়ার জন্য তাদের কাছে দাবি জানান।

বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয়দের নিকট মুর্শিদা সুলতানা জানায়, আব্দুর রহমান বিভিন্ন সময়ে কিবরিয়ার স্ত্রীর মোবাইলে ম্যাসেস দিত। তখন আমি আমা’র স্বামীকে বলেছিলাম আমিও কিবরিয়ার সাথে প’রকীয়া প্রেম করবো। কিন্তু মুর্শিদা বৈঠকে তার কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি। যা এলাকাবাসী অযৌ’ক্তিক ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

সৌদি প্রবাসি শফিকুল ইসলাম তার ফেসবুকে বিচার দাবি করে বলেন, শাহপুর বাজারের দোকানদার শাহ বিএম কিবরিয়ার সাথে রহমান ভাইয়ের বউ খারাপ থাকায় রহমান ভাই গলায় র’শি দিয়ে মা’রা গেলেন। আমর’া এর বিচার চাই।