রাগ নয়, ক্ষমা করার মাহাত্ম্যই হলো- ইসলাম

1629

রাগ নয়, ক্ষমা করার মাহাত্ম্যই হলো- রাগ মানব চরিত্রের এক দুর্বল দিক। ইসলামে রাগ প্রসঙ্গে রয়েছে কার্যকর নির্দেশনা।

কুরআনে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার সময় বলা হয়েছে, ‘যারা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে, মানুষকে ক্ষমা করে।’ -সূরা আলে ইমরান: ১৩৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, রাগ করো না। তিনি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করলেন। রাসূল (সা.) বললেন, রাগ করো না।’ –সহিহ বোখারি শরিফ।

বর্ণিত হাদিসে আলোকে এতে বুঝা যায়- রাগ নয়, বরং ক্ষমা করার মাহাত্ম্যই হলো- ইসলাম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের টানা দশ বছরের খাদেম হজরত আনাস (রা.) স্বীকৃতি দিয়েছেন, ‘তিনি (নবী করিম) কখনও না করা কাজের ব্যাপারে বলেননি- এটা কেন করোনি। আর করা কাজের ব্যাপারে কখনও বলেননি- এটা কেন করেছো!’ –সুনানে তিরমিজি।

এ আলোচনা দ্বারা খুব সহজেই বলা যায়- রাগ না করা উত্তম চরিত্রের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমরা একবার তকদির সম্পর্কে পরস্পরে আলোচনা করছিলাম, সে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কামরা থেকে বের হলেন। তার চেহারা এমন রক্তাক্ত হয়েছিলো, যেন ডালিমের দানা নিংড়ে দেওয়া হয়েছে। রাগান্বিত স্বরে বললেন, তোমাদের আদিষ্ট বিষয় কি এটা?

নাকি এ নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি? তোমাদের পূর্ববর্তীরা এ নিয়ে মতভেদের কারণে ধ্বং.. স হয়েছে। আমি তোমাদের দৃঢ়ভাবে বলছি- দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবে না।’ –তিরমিজি। হাদিসসমূহ থেকে বুঝা যায়, মানবতা ও দ্বীনের স্বার্থে রাগান্বিত হওয়া ঈমানের অংশবিশেষ।

অন্যায় ও দ্বীনহীনতা দেখেও যে রাগান্বিত হয় না, সে রাসূলের আদর্শের ওপর নেই। তবে শিক্ষণীয় বিষয় হলো, রাগের সময়ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি এমন কথাই বলেছেন, যা সুন্দর পথের নির্দেশনা দেয়। তেমনি আমাদেরও রাগের ক্ষেত্রে এই সীমারেখা টেনে দেওয়া দরকার। অনিয়ন্ত্রিত রাগ কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনে না।

নামাজ যে কারণে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত

নিজেকে পরিশুদ্ধ করার একমাত্র ইবাদত নামাজ। এ ঘোষণা স্বয়ং আল্লাহ তাআলার। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ (মানুষকে) অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)

নামাজ মানুষের অন্যতম ইবাদত হওয়ার কারণ হলো, এ নামাজের মাধ্যমেই মানুষ যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থেকে পবিত্র জীবন-যাপন করে। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে।

ফোয়ারা বা নদীতে যেমন আপনা-আপনি পানির স্রোত বয়ে যায় ঠিক তেমনি ঈমানদার ব্যক্তির কাছেও স্রোতের মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পর্যায়ক্রমে উপস্থিত হতে থাকে। কোনো ব্যক্তি যদি নদী কিংবা পানির ফোয়ারা থেকে গোসল করে তবে তার শরীর থেকে যেভাবে ময়লা বিদূরিত হয় ঠিক তেমনি কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথারীতি আদায় করে তবে তাদের জীবন থেকেও গোনাহনামক ময়লা বিদূরিত হয়ে যায়।

এ কারণেই রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন- ‘জেনে রেখো! নামাজই তোমাদের সর্বোত্তম ইবাদত। নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, আল্লাহর তাআলার হুকুম পালন বা ইবাদতে সবচেয়ে বেশি আনুগত্য প্রকাশ পায় এ নামাজের মাধ্যমে। নামাজে আল্লাহ এবং বান্দার বাইরে আর কারো কোনো অংশ থাকে না।

বান্দা নামাজ পড়ার মাধ্যমে একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহ তাআলারই শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে। বান্দা যেন মহান আল্লাহ তাআলার একান্ত সান্নিধ্য লাভ করতে পারে, সে জন্যই আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর প্রতিদিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আর বান্দাও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহকে একান্ত আপন করে নেন। তাই নামাজকে মুমিনের মেরাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

মনে রাখতে হবে, নামাজ ফরজ ইবাদত। ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। অন্যসব ইবাদতের আগে প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য যথাযথ সময়ে তা আদায় করা ফরজ। কোনো অজুহাতেই নামাজ তরক করা যাবে না। কারণ- ‘মুসলিম এবং কাফের ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ তরক করা।’

অর্থাৎ কাফের নামাজ ছেড়ে দেয় আর মুসলিম নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। মানুষের ঈমান লাভের পর নামাজই হলো ঈমানদারের বাহ্যিক প্রমাণ। যে সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করে সেই প্রকৃত মুমিন। যে নামাজ আদায় করে না সে মুমিন হতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শত প্রতিকূলতার মাঝেও যথাযথভাবে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত রাখার তাওফিক দান করুন। পরিপূর্ণ মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।