রাত যত গভীর হয় পোষাক তত ছোট হয় তরুণীদের

1583

মাই নেইম ইজ শিলা, শিলা কী জোয়ানি… হিন্দি গান বাজছে। তালে তালে নাচছেন এক তরুণী। তার পরনে হেজাব। শরীর থেকে একের পর এক পোষাক খুলছেন তিনি।

ছুঁড়ে মারছেন আর মিষ্টি হাসি দিচ্ছেন। কড়া লাল লিপিস্টিকে রাঙা ঠোঁট দুটি ফুলের মতো পাপড়ি মেলছে যেনো। দুটি আঙুল সোজা করে বন্দুকের নিশানা ঠিক করছেন। যেনো এক্ষুণি কাউকে গুলি করবেন।

শিকারী দু’চোখে চরম দুষ্টুমি। চোখ টিপছেন, মুচকি হাসছেন।

মধ্য রাতে তরুণীর উত্তাপ ছড়ানো কাণ্ড দেখতে কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির সহস্র মানুষ। একের পর এক বস্ত্র খুলতে খুলতে তরুণীর শরীরে অবশিষ্ট দুটি পোশাক।

অনেকের ধারণা ছিলো তাও খুলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মেলে ধরবেন হয়তো। কিন্তু তরুণী নিজেই জিজ্ঞাসা করেন, হ্যালো ফ্রেন্ডস আরও দেখতে চাও? ফ্রি ফ্রি আর কত.. বাকিটা দেখতে হলে ইমোতে আসতে হবে। সব দেখাবো। তবে শর্ত প্রযোজ্য। আগে পে, আগে বিকাশ, দেন উষ্ণ আদর দেব, যতো চাও।

হ্যাঁ কথাগুলো বলছিলেন ফেসবুক লাইভে। দশর্ক তা দেখছিলেন আর লাভ, লাইক রিয়েক্ট দিচ্ছিলেন। অনুনয়ন করে কমেন্ট করছিলেন অনেকে, আরও দেখাও.. আরেকটু প্লিজ। তুমি অনেক সুন্দর, অনেক হট.. ইত্যাদি।

কেউ কেউ অবশ্য দেখছিলেন আবার নসিহতও করছিলেন। বলছিলেন, এগুলো ভালো না। ভালো হয়ে যাও। অনেকেই নিজেদের ফোন নম্বর দিচ্ছিলেন। লিখছিলেন, তোমাকে চাই। ইনবক্সে আসো প্লিজ.. এইসব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অসংখ্য নারী রয়েছে। যারা শারীরিক-মানসিক প্রশান্তি দিতে হাজির হন লাইভে। সেখান থেকে অর্থের বিনিময়ে ডেকে নেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি নিজের বাসাতে। কেউ কেউ বাইরেও আসেন। তাদেরই একজন নিশি। এটা তার ফেইক নাম। প্রকৃত নাম গোপন করে লাইভে আসেন। পুরো চেহারা দেখান না কখনও। সর্বোচ্চ আবেদনময়ী ঠোঁটের হাসি পর্যন্ত প্রদর্শন করেন।

নিশির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাভারের বিরুলিয়ায় থাকেন। স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ রয়েছে সংসারে। স্বামী পরিবহন শ্রমিক। নিশির লেখাপড়া মাধ্যমিক পর্যন্ত।

এই পরিবারের তিন নারীই অ”নৈ”তি”ক”ভা”বে অর্থ উপার্জন করেন। নিজেদের শরীর-সৌন্দর্যই তাদের পুঁজি। তবে শ্বাশুড়ির কদর নেই। বয়স হয়েছে, তার চে বড় কথা সময় পাল্টেছে।

সন্ধ্যার পর প্রান্তকুঞ্জ, ফার্মগেট বা আগারগাঁও এলাকায় দাঁড়ালেই আগের মতো বাণিজ্য হয় না। সবাই ঝুঁকছে এখন ইন্টারনেটে। সেখান থেকেই নিরাপদে সঙ্গী খুঁজে নিচ্ছে। এতে পিছিয়ে রয়েছেন যারা তাদের বাণিজ্য ভালো না। তাছাড়া এখন এই পেশাতেও স্মার্ট হতে হয়।

জানতে হয় অনেক কিছু। নাচ, গান, শুদ্ধ-সুন্দর করে কথা বলতে হয়। নিয়মিত পার্লারে যেতে হয়। খাবার নিয়ন্ত্রন রাখতে হয়। ব্যায়াম করতে হয়। তার ভাষায়, প্রত্যেককেই এক একজন ক্যাটরিনা কাইফ হতে হয়। নইলে টাকাওয়ালাদের ধরা যায় না। তারা তারকা হোটেলমুখি।

শ্বাশুড়ির পরামর্শেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে আসেন। মাঝে-মধ্যে পার্টিতে যান। নাচ করেন। সঙ্গে নিয়ে যান কম বয়সী ননদকেও।

স্বামী পরিবহন শ্রমিক হলেও মাঝে মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেন। অলস সময় কাটান। মা’দ’কে’র নে”শা আছে তার। বয়স্ক শ্বশুর অসুস্থ। বাধ্য হয়েই এই পরিবারের তিন নারীকে অর্থ উপার্জন করতে হয়।

সম্প্রতি একটি লাইভে নিশি বলেছেন, পরামর্শ দিতে টাকা লাগে না। এসব দিতে হবে না। এগুলো জানা আছে। চাকরি করতে গেলেও মালিক কুপ্রস্তাব দেয়। রাজি না হলে চাকরি যায়। কেউ এমনি এমনি টাকা দেয় না। তাই সেবা দিই, টাকা নিই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরকম নিশি অসংখ্য। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্দিষ্ট কোনো ফ্লাটফর্ম না থাকায় নিশিরা পরিচয় গোপন করে সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছেন। ইন্টারনেটকে তারা একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন। ইন্টারনেট সুরক্ষার জন্য এ বিষয়ে শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। যেনো একের কর্মকাণ্ডে অপরের ক্ষতি না হয়।